টলিপাড়ার (Bengali Serial) ধারাবাহিগুলিতে এখন প্রেম, মনখারাপ থেকে সংঘাত, সব অনুভূতির প্রকাশ ঘটছে হিন্দি গানের মাধ্যমে। চরিত্রেরা বাংলা ভাষায় কথা বললেও আবেগের সুর হিন্দিতেই (Hindi Song) বাজে। বিয়ে মানেই এখন ‘মেহেন্দি’, ‘সঙ্গীত’ এর মতো উত্তর ভারতীয় প্রথা, আর পেছনে চলে ‘মেহেন্দি লাগা কে রাখনা’, ‘বলে চুরিয়ান বলে কাঙ্গানা‘! প্রেম পড়লে ‘তুম হি হো’ কিংবা ‘গুলাবি আঁখেঁ’! যাঁরা নিয়মিত বাংলা ধারাবাহিক দেখেন, তাঁদের কাছে এই দৃশ্য এখন অভ্যস্ত। কিন্তু এই প্রবণতা বাংলায় এল কোথা থেকে?
অথচ দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক ধারাবাহিক, বিশেষ করে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিগুলিতে এমন হিন্দি আধিপত্য নেই। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অনেক প্রযোজক ও নির্মাতার মতে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হিন্দি গানের জনপ্রিয়তা ও ‘ট্রেন্ডি’ ভাবমূর্তির জোরেই এই সিদ্ধান্ত। স্টারের এক প্রাক্তন প্রযোজকের ব্যাখ্যায়, আজকের বাঙালি যুবসমাজের কাছে হিন্দি গান ‘অ্যাস্পিরেশনাল’, মানে যা তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে মেলাতে চান। হিন্দি গানের গ্ল্যামার আর শহুরে ভাবধারা বাংলা গানকে ক্রমে কোণঠাসা করে দিচ্ছে।
বিশেষ করে রোম্যান্টিক ধারাবাহিকে এই চিত্র আরও প্রকট, যেখানে প্রেম বোঝাতে বাংলা গানের বদলে হিন্দি গানই পছন্দ হচ্ছে নির্মাতাদের। তবে এই প্রবণতাকে একপ্রকার সাংস্কৃতিক দুর্বলতা হিসেবেই দেখছেন অনেকেই। প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তীর মতে, “সিরিয়াল আসলে সমাজের আয়না। আর সেই আয়নায় এখন বাংলার বদলে ফুটে উঠছে হিন্দি সংস্কৃতি।” তাঁর মতে, “এর ফলে বাংলার নিজস্ব সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের সংকট। আগে যেভাবে বাঙালি সাহিত্য, গান, ভাষা নিয়ে গর্ব করত,
এখন সেই সম্পর্ক ক্রমশ শিথিল হয়ে যাচ্ছে। আর এই পরিবর্তন বাংলার সামাজিক বাস্তবতাকেই তুলে ধরছে, যা কেবল পর্দার নয়, বাস্তবেরও।” অন্যদিকে, লেখিকা-পরিচালক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, হিন্দি গান ব্যবহারে কোনও সমস্যা নেই, যদি তা গল্পের প্রয়োজন মেটায়। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, “এখনকার প্রজন্ম বহুভাষিক, তারা একসঙ্গে হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি তিনটিই ব্যবহার করে। নিজের ধারাবাহিকও এটাই করে থাকি। তাই ধারাবাহিকেও যদি সেই কসমোপলিটান দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়, সেটি দোষের নয়।”
আরও পড়ুনঃ রুদ্রর গু’লিতে লুটিয়ে পড়লেন স্বাগতা ম্যাডাম! ফুলকির সন্দেহই সত্যি! রুদ্র জে’লের বাইরে আরও দুই মুখোশে ঘুরছে! ফুলকি কি পারবে ষড়য’ন্ত্র ফাঁ’স করতে?
তবে তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন যে, বাংলা ধারাবাহিকের অনেক অভিনেতা এখন বাংলার সাধারণ শব্দও বুঝতে পারেন না, যা মাতৃভাষা শিক্ষার অভাবে ঘটছে। শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকে যায়, এই হিন্দি আধিপত্য কি শুধুই বাজার ধরে রাখার কৌশল, নাকি বাঙালির সাংস্কৃতিক মানসিকতার বাস্তব প্রতিচ্ছবি? বাংলা গান, কবিতা, সাহিত্যের ঐতিহ্যবাহী ভূমিতে যখন আবেগ বোঝাতে অন্য ভাষার আশ্রয় নিতে হয়, সেটা এক সাংস্কৃতিক সংকটের ইঙ্গিত।