তিনি বাংলা সিরিয়ালের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তবে মূল নায়িকা চরিত্রে নয় বরং পার্শ্ব চরিত্রেই তাঁকে বেশি দেখা যায়। তিনি অভিনেত্রী সুস্মিতা রায় চক্রবর্তী। ইতিবাচক মনোভাব ও অসম্ভব মনের জোর এই অভিনেত্রীর। আর অসম্ভব বাস্তববাদী হওয়ায় জীবনযুদ্ধের এই কঠিন লড়াইয়ে জিতে গেছেন তিনি।
তাঁর গোটা জীবনটাই কেটেছে প্রায় সংগ্রাম করে। অভিনেত্রী হতে চাই মেয়ের এই সিদ্ধান্তে প্রবল আপত্তি ছিল সরকারী চাকুরীরত মা-বাবার। সুন্দরবনের গোসাবার গ্রামের মেয়ে সুস্মিতা। বাবা-মা রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পালিয়ে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। আর তাই তিনি অকপটে বলেন আমি জীবনে ভয় পাইনা। তাঁর কথায় ভয় পেলে আজ কলকাতা শহরে গাড়ি, বাড়ি করা সম্ভব হতনা।
এই অভিনেত্রীকে কখনও দেখা গেছে ‘কৃষ্ণকলি’র পার্বতীর চরিত্রে, কখনও আবার ‘অপরাজিতা অপু’র দিৎসা, আবার বাড়িতে সকলের প্রিয় ‘টুবলু।’ বিভিন্ন চরিত্রে নজরকাড়া তিনি। একট সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর গডফাদার বলে কেউ নেই। এমনকী বাড়ির লোক তাঁর পেশা জানতে পেরে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। যদিও আজ তাঁরা মেয়ের জন্য গর্বিত।
উল্লেখ্য, কলকাতা শহরে শুরুর দিকের প্রত্যেকটাদিন একটু খাবার, একটু মাথা গোঁজার জন্য ছাদের জন্যও লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। এমনকী শিয়ালদহের ফুটপাতে ত্রিপলের নীচে ১৫ দিন কাটিয়েছেন।এমনকী সোনারপুর থেকে সল্টলেক হেঁটে অডিশন দিয়েছেন টাকার অভাবে। কিন্তু হেরে যাননি। নিজের অদম্য জেদ আর লড়াইয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন দর্শকদের মনে।
আরও শুনবেন? কৃষ্ণকলি ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালীন সন্তানসম্ভবা হন অভিনেত্রী। না ছুটি নেননি তিনি। আর তাই পার্বতীর চরিত্র করার সময় ধারাবাহিককেও দেখানো হয় তিনি অন্তঃসত্ত্বা। জানা যায়, ডেলিভারির ১ সপ্তাহ আগে পর্যন্ত তিনি শুটিং করতে গেছেন সমস্যা ছাড়াই। চিকিৎসকের গাফিলতিতে ১০ মাসের পরিপূর্ণ সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।
ডেলিভারির দু’দিন আগে চেকআপেও দেখা যায় যে মা ও সন্তান দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ। হঠাৎই চিকিৎসক পিছিয়ে দেন ডেলিভারির দিন। চেকআপের পরের দিন থেকেই সন্তান রেসপন্স করছিল না। চিকিৎসক ফোন না ধরায় তড়িঘড়ি হাসপাতালে যান তিনি। চিকিৎসক দেখে জানান, বাচ্চার হার্টবিট কম। ১০৩। এর পর অভিনেত্রীকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাচ্চার হার্টবিট নেই। জন্মানোর একদিন আগেই পেটের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর সন্তানের। অপারেশন করে বার করে আনা হয় মৃত সন্তানের দেহ। দেখতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরেও হেনস্থার শেষ ছিল না।
যদিও সেই কঠিন পর্ব পেরিয়েছেন তিনি। ফিরেছেন কাজে। তবে এখন আর আগের মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করেন না । ওয়েব সিরিজ, সিনেমা, এমনকি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্যও কাজ করেছেন তিনি। তবে ফিরতে চান ধারাবাহিকে। কারণ তিনি মনে করেন একমাত্র ধারাবাহিকই অভিনেতা- অভিনেত্রীদের দর্শকের মনে বাঁচিয়ে রাখে। আর তাই একটি সাক্ষাৎকারে পরিচালকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন যেন তাঁকে ধারাবাহিকে কাজে দেওয়া হয়।