জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

‘মেডিকেল সাইন্স ঘরের কোনায় কাঁদছে এই ব্রত দেখে’, ‘এমন ব্রত সিরিয়ালেই হয়, যতসব আজগুবি কথাবাত্রা!’ ‘কুসুম’এ চিকিৎসায় নয়, এবার মা-স্ত্রীর অদ্ভুত ব্রতের জোরেই সুস্থ হবে আয়ুষ্মান! সমাজ মাধ্যমে এই বিতর্কিত দৃশ্য নিয়ে উঠেছে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের ঝড়!

জি বাংলার ধারাবাহিক ‘কুসুম’ (Kusum) শুরুতেই অনেক দর্শকের মন জয় করেছিল। কুসুমের চরিত্রটা ছিল এক সাধারণ মেয়ের, যে সমাজের বিধি-নিষেধ বা অন্যের বানানো নিয়মের ভয়ে আটকে থাকত না। সে নিজের মতেই চলত, নিজের মানসিক দৃঢ়তার সঙ্গে জীবনকে মোকাবিলা করত। এই সরল সাহসী মেয়ের গল্প অনেককে প্রেরণা দিয়েছিল। কিন্তু যতোদিন এগোচ্ছে, গল্প সেই বাস্তবতার ছোঁয়া ক্রমে হারাতে শুরু করেছে। ধারাবাহিকের নতুন মোড়গুলো অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় নাটকীয়তা আর অবাস্তবতার সঙ্গে মিলে গল্পের স্বাভাবিক স্রোতকে ভেঙে দিচ্ছে।

এই ধারাবাহিকের যে ঘটনাগুলো দর্শকদের বিভ্রান্ত করেছে, তার শুরুটাও ছিল অত্যন্ত অবাস্তব ধারণা থেকেই। ছোট সাহেব আয়ুষ্মান এবং কুসুমের অভিনীত বিয়ের দৃশ্যকে কুসুম বাস্তব মনে করে ফেলে। যদিও আয়ুষ্মান স্পষ্ট করে এটি শুধুই অভিনয়, কুসুম বিশ্বাস করে যে সেই সিঁদুরে তাঁরই নাম লেখা। এই ছোট ভুল বোঝাবুঝি থেকে রাতুলের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যায় কুসুমের। বাস্তবতা আর অভিনয়ের মধ্যে যে সীমারেখা, সেটা ক্রমে কুসুম নিজেই মুছে দিয়েছে এবং দর্শকরা বাধ্য হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এইসব নিয়ে।

কুসুমের বাবাও এই পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েন। কুসুমের অন্ধবিশ্বাস থেকে সমাজের বিদ্রুপ মিলিয়ে তাকে সম্পূর্ণভাবে আহত করে দেয় মানসিকভাবে। এদিকে ধারাবাহিকের নতুন পর্বে দেখা যায়, কুসুমের নিজের বোঝাপড়া আস্তে আস্তে আসে এবং সে সিঁদুর মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে আয়ুষ্মানকে গাড়ি ধাক্কা আর বৃষ্টিতে সিঁদুর ধুয়ে যাওয়াকে কুসুম ইঙ্গিত মনে করে। তারপর আবার নোয়ার খোলার সঙ্গে দুর্ঘটনার সম্পর্ক তৈরি করে, যা দর্শকের কাছে একেবারেই অযৌক্তিক মনে হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে কুসুমের ব্রত এবং কুসংস্কারের দৃশ্য নিয়ে। কুসুমকে এক পুরোহিত কঠিন ব্রত পালন করতে বলেন আর আয়ুষ্মানের মাকে পরামর্শ দেওয়া হয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল ভিক্ষা চেয়ে আনা এবং ছেলেকে রান্না করে খাওয়ানোর, এতেই নাকি হয়ে উঠবে আয়ুষ্মান! এই দৃশ্য দেখে দর্শকরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ বলছেন, “এমন ব্রত সিরিয়ালেই হয়, যতসব আজগুবি কথাবাত্রা।” অন্যজন মন্তব্য করছেন, “মেডিকেল সাইন্স ঘরের কোনায় বসে কাঁদছে রে এই ব্রত দেখে!”

আবার একজন বলেছেন, “দিন দিন বাংলা ধারাবাহিক কাল্পনিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত। এসব একদম মেনে নেওয়া যায় না!” তবে, এই বিতর্কই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে! কুসুমের মতো ধারাবাহিকগুলো কি সত্যিই সমাজকে সাহসী চরিত্রের গল্প দেখাচ্ছে, নাকি কুসংস্কার ও অতিরিক্ত নাটকীয়তার উৎসাহই বেশি? দর্শকরা যতই এই দৃশ্য উপভোগ করুন, অযৌক্তিক ব্রত ও অন্ধবিশ্বাসের প্রদর্শনী অনেককে হতাশ করছে। আধুনিক সমাজে যখন মানুষ কুসংস্কার ভাঙার চেষ্টা করছে, তখন জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলো উল্টো সেই পুরনো বিশ্বাসকেই শক্তিশালী করে তুলছে!

Piya Chanda