বর্তমানে জি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক হলো মিঠাই। কিন্তু এই সিরিয়ালে এমন কিছু জিনিস দেখানো হচ্ছে যা দেখে কিছু মানুষের একটু অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে একটা জিনিস নিয়ে বেশ কিছু দর্শকের খারাপ লেগেছে সেটা হল যে বারংবার মিঠাইকে জোর করে ভালো দেখানো হয় আর তোর্সা যতই মোদক পরিবারের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করে তাকে নিয়ে করা হয় হাসাহাসি।
এ কথা তো আমরা সবাই জানি বাংলা সিরিয়ালে উচ্চ শিক্ষিত মেয়েদেরকে ভিলেন করা হয়। এই মধ্যযুগীয় ধারণাটা কেন এখনো জি বাংলা এবং স্টার জলসা দুজনেই দেখায় সেটা কারোর জানা নেই।গ্রামের মেয়ে যারা ঠিকমতো কথা বলতে পারে না তারাই নায়িকা হয় এবং তাদেরকে সারাক্ষণ মাথায় তুলে রাখা হয়। মিঠাই কলকাতা শহরে এসেছে দু’বছর হয়ে গেল কিন্তু এখনো ভুলভাল ইংলিশ বলে যাবে তবুও সেটা নিয়ে তাকে কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু কর্পোরেট কালচারে মানুষ হওয়া উচ্চ শিক্ষিত তোর্সা যখন মোদক পরিবারের কিছু করার চেষ্টা করে তখন তাকে সব সময় ছোট করে সিড আর তাকে সঙ্গ দেয় মোদক পরিবারের বাকিরা।
মিঠাইয়ের ভুলভাল ইংলিশ শুনলে মাথা গরম হয় সকলের।কারণ এটা ধারাবাহিকের শুরুর দিকে হলে মানা যেত কিন্তু দু বছর হয়ে গেছে কলকাতায় ভবানীপুর-রাসবিহারীর মতো এলাকায় থাকে আর ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ে কেউ যদি এরকম ইংলিশ বলে তাহলে খুব মুশকিল। সেই সঙ্গে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানো আর সমানে সিডকে মুখ ভেংচানো এই জিনিসটা সারাক্ষণ ভালো লাগেনা। আর দাদু দাদু করে এমন ন্যাকামো করবে যে বিরক্ত লাগে। এটা কিছু ভক্তদের মত কারণ তারা মিঠাইকে অনেক পরিবর্তিত হতে দেখতে চেয়েছিলেন।
ফুলঝুরি নিজেকে কতটা পরিবর্তন করেছে এক বছরে সেখানে মিঠাই কিছুই পরিবর্তন করতে পারল না নিজের। তবে আজকের এপিসোডে একটা জিনিস খুব খারাপ লেগেছে যুক্তি বুদ্ধি সম্পন্ন প্র্যাকটিক্যাল ভক্তদের। মোদক বাড়ির লক্ষ্মী পুজোতে বড় বউ তোর্সা, সুন্দর করে মা লক্ষ্মীর মত সেজেছিল এবং লক্ষ্মী পাঁচালী পড়তে চেষ্টা করেছিল।
স্বাভাবিকভাবে ছোটবেলা থেকে কনভেন্টে পড়া তোর্সা ঠিক করে সেটা পারেনি। আর চলে এলো সিড হ্যাটা মারতে। কেন মিঠাইয়ের সঙ্গে কম্পিটিশন করতে যাস, যেটা পারিস না সেটা তো না করলেই পারিস ইত্যাদি বলে দমিয়ে দেয় তোর্সাকে আর মিঠাই সহ বাকি পরিবারের তো সেটা দেখে খুব মজা লাগে।
কিন্তু এটা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।অনেকে বলছে যে মানা গেল সিড আর মিঠাই নায়ক-নায়িকা কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কাজকর্ম করে দেখলে মনে হবে এরা ভিলেনের চেয়ে কম কিছু নয়। যবে থেকে সোমদা নেই তবে থেকে কিন্তু তোর্সা অনেক চেষ্টা করেছে নিজেকে পরিবর্তন করার। কিন্তু তাকে সব সময় বাড়ির সকলে এবং সিদ্ধার্থ বারবার অপমান করে।
সিদ্ধার্থ নিজে ঠিক করে পারবে এইসব করতে? সে নিজেও বাংলা ভালো করে বলতে পারেনা। সিদ্ধার্থের যা যোগ্যতা ঠিক সেই একই যোগ্যতা কিন্তু তোর্সার। শুধু তোর্সা বাড়ির বউ বলে তাকে সব সময় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে আর সিড বাড়ির ছেলে বলে নিজের অহংকারী মনোভাব সারাক্ষণ সামনে আনবে। সেটা কেন?
আর যদি সোম এখানে থাকত নিজের বউয়ের প্রতি এই অপমান কি সে মেনে নিত? বেশ কিছু জন বলছে মোদক পরিবারের ছেলে তো, নিত মেনে। অনেকেই বলছেন যে তোর্সা তো চেষ্টা করছে বাঙালি বউ হয়ে ওঠার, তাকে উৎসাহিত না করে এরকম ভাবে অপমান করা হয় কেন? মিঠাই কি একবারও নিজেকে কর্পোরেট কালচারে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করেছে? তার ভুলভাল ইংলিশ গুলোকে নিয়ে কেন কিছু বলে না কেউ?
এই জিনিসগুলো এবার একটু ভাবা দরকার সিরিয়াল নির্মাতাদের। তোর্সা আগে ভীষণ স্ট্রং একটা চরিত্র ছিল কিন্তু এখন পুরোপুরি কমেডি চরিত্র হয়ে উঠেছে। তার থাকা আর না থাকা সমান। এবার মিঠাইকে একটু আপডেট করা হোক আর তোর্সা কে তারপর ভারতীয় বানানোর চেষ্টা করা হোক। এরকমটাই বলছেন সকলে।
অনেক নিরপেক্ষ মিঠাই ভক্তরা বলছেন যে, এ কথা ঠিক মিঠাই প্রয়োজনের চিকেন ইন লেমন বাটার সস বানিয়েছে, এক দুবার আধুনিক সেজেছে। সেই সময় মোদক পরিবার এবং বাকি ভক্তরা মিঠাইকে নিয়ে প্রায় উৎসব করে ফেলেছিল।
কিন্তু এইবার তোরসা লক্ষ্মী বউ সেজে পাঁচালী পড়ার চেষ্টা করতে সেই প্রশংসাটা কেন করা হলো না? এটা কি নিরপেক্ষ থাকছে মোদক পরিবার? এ কথা তো সত্যি যে তোরসা মোদক পরিবারের বড় বউ। কিন্তু তাকে একটুও কি উৎসাহিত করে মোদক পরিবার?