জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

ঋতুস্রাবের সময় নারীদের শুনতে হয়, ‘ন্যাকামি করছে! শ্বশুর বাড়িতেও সব সময় মেয়েদেরই মানিয়ে নিতে বলা হয়, সবকিছুর দায় কেন মেয়েদের? প্রশ্ন তুললেন লগ্নজিতা

বর্তমান বাংলা সংগীত জগতের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ‘লগ্নজিতা চক্রবর্তী’ (Lagnajita Chakraborty) । তাঁর কণ্ঠের আবেগ, সুরের সাবলীলতা এবং গানের গভীর অনুভূতি শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। প্রথমদিকে বিভিন্ন প্লেব্যাক ও স্টেজ শোয়ের মাধ্যমে সংগীতজগতে প্রবেশ করলেও, ২০১৪ সালে “বুনো হাঁস” সিনেমার “বসন্ত এসে গেছে” (Bawshonto Eshe Geche) গানটি তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। এরপর একের পর এক সুপারহিট গান তিনি উপহার দিয়েছেন, যেমন “প্রেমে পড়া বারণ,” “বিয়ে লেগেছে,” “আদর,” ইত্যাদি।

লগ্নজিতার গানে বরাবরই একধরনের স্নিগ্ধতা আর স্বতন্ত্র আবেগের মিশেল থাকে। তিনি শুধু প্লেব্যাক নয়, ইন্ডিপেনডেন্ট মিউজিকেও নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। তাঁর সঙ্গীতজীবন নতুন প্রজন্মের অনেক শিল্পীর জন্য অনুপ্রেরণা। গানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও গভীর আবেগের ছোঁয়া প্রতিটি গানে ধরা পড়ে, যা তাঁকে সমসাময়িকদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। লগ্নজিতা বরাবরই একজন সাহসী শিল্পী, যিনি তাঁর গানের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশের পাশাপাশি সমাজের নানা অসংগতি নিয়েও কথা বলেন।

image 30

তাঁর মতে, শিল্পী মাত্রই সমাজের প্রতিচ্ছবি, এবং সমাজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তোলা তাঁদের দায়িত্ব। নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও সাংস্কৃতিক স্টেরিওটাইপ নিয়ে তিনি সরব হয়েছেন বারবার। শুধু গান নয়, সমাজের নানা ইস্যু নিয়েও লগ্নজিতা সর্বদা সচেতন। তিনি মনে করেন, একজন শিল্পী কেবল বিনোদন নয়, বরং সমাজকে বদলানোর মাধ্যম হিসেবেও কাজ করতে পারেন। নারীদের প্রতি বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার, এবং এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার জন্য তাঁর সাহসী অবস্থানকে অনেকেই সাধুবাদ জানান। তাঁর মতো শিল্পীদের কণ্ঠস্বরই নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

সম্প্রতি লগ্নজিতা চক্রবর্তী নারীদের সামাজিক অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “ঋতুস্রাবের সময় নারীদের শুনতে হয়, ‘ন্যাকামি করছে!’ অথচ পুরুষদের তো ব্যথা নিয়ে কাজে যেতে হয় না! কেউ ভেবেছিল বলেই আমরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করি। শাড়ির কাপড় কেটে ব্যবহার করতে হয় না আর”, তাঁর মতে ঋতুস্রাব নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে নারীদের কষ্ট স্বীকার করা উচিত। তিনি বলেন, “নারী-পুরুষ সমান হলেও শারীরিক গঠনে পার্থক্য থাকে। তাঁর স্বামী ২০ কেজির ব্যাগ সহজে তুলতে পারে, কিন্তু তিনি পারবেন না। নারীরা সন্তান জন্ম দিতে পারে বলে বেশি শক্তিশালী নয়। বরং তাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যা বোঝা জরুরি।”

তাঁর এই বক্তব্য সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। লগ্নজিতা চক্রবর্তী মনে করেন, বাড়ির মা, শাশুড়ি, কাকিমা, জেঠিমারাই প্রথম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, কারণ তাঁরাও একসময় একই বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা যতটুকু এগোতে পেরেছিলেন, বর্তমান প্রজন্ম তার চেয়েও বেশি বলতে পারছে। তিনি মনে করেন, শ্বশুরবাড়ির প্রসঙ্গে সবসময় মেয়েদের মানিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়, কিন্তু বাড়ির পুরুষদেরও মানিয়ে নেওয়া উচিত। বাপের বাড়ি থেকে সবসময় মেয়েদেরই দোষী ভাবা হয়, যা বদলানো দরকার।

Piya Chanda