ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হলেন অশোক কুমার অর্থাৎ সকলের প্রিয় ‘দাদামনি’। অনেকেই বলেন তার হাত ধরেই ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে গ্ল্যামারের সূচনা হয়েছিল। গোটা দেশের প্রতিবাদের একই ছাদের তলায় নিয়ে এসেছিলেন অশোক কুমার নিজে। গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের বড় ছেলে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি ১৩ই অক্টোবর গেল তার জন্মদিন।
১৯১১ সালের ১৩ ই অক্টোবর বিহারের ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। চার ভাই বোনের মধ্যে তিন জনেই ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত মুখ। ভাই অনুপ কুমার এবং কিশোর কুমারও (কল্যাণ এবং আভাস) চলচ্চিত্র জগতের দুই বড়ো নাম। তিন ভাইকে একসাথে দেখা গিয়েছিল ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ ছবিতে। ছবিটির সাথে সাথে ছবিটির গানের জনপ্রিয়তা ও আজ ও বর্তমান।
বয়সে সবার থেকে বড় হলেও অশোক কুমার সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে ছিলে। নিজের চোখের সামনে নিজের ছোট ছোট ভাই বোনদের চলে যেতে দেখেছিলেন তিনি। নিজের প্রতিটি জন্মদিন খুব ধুম ধাম করে পালন করতেন দাদা মনি। তবে ১৯৮৭ সালে নিজের জন্মদিনের দিন নিজের সন্তান তুল্য ছোট ভাইকে হারান। অর্থাৎ খুব অল্প বয়সে কিশোর কুমার এই দিনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর সেদিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে আর কোনদিন তার জন্মদিন তিনি পালন করবেন না।
প্রসঙ্গত তাদের বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী। অশোক কুমার বড় ছেলে হওয়ার দৌলতে তাদের বাবা চেয়েছিলে যে তিনি তার পেশাতেই নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন। সেই মত প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি ও করান তাকে। তবে প্রথম পরীক্ষাতেই অনুর্তীর্ণ থাকার জন্য বাড়ি ছেড়ে বোনের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে গা ঢাকা দেন তিনি। তারপর আর বাড়ি ফেরার সাহস হয়নি তার। পরের পরীক্ষা পর্যন্ত গা ঢাকা দেন বোনের শ্বশুরবাড়িতে। সেই সময় হাতখরচ জোটাতে কাজ শুরু করেন তার জামাইবাবুর সহযোগিতায় বম্বে টকিজে ল্যাব সহকারি হিসেবে। তাতেই সিনেমার প্রতি আকর্ষণ জন্মায়।
তারপর থেকেই হঠাৎ এই সিনেমা জগতে আসেন তিনি। এবং সিলভার স্ক্রিনে অশোক কুমার নামে পরিচিত হন। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তার অবদান কখনোই ভোলার নয়। তার অভিনয়ের জন্য অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান। এছাড়াও রয়েছে দাদাসাহেব ফালকে, সঙ্গীত নাটক অকাডেমি, জাতীয় পুরস্কার। অবশেষে ২০০১ সালের ১০ই ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন এই অভিনেতা।