বাংলা ধারাবাহিকে চৈতালী চক্রবর্তীর একজন ভীষণ পরিচিত মুখ। মূলত নেগেটিভ চরিত্রেই আমরা তাকে দেখতে পাই। কিছুদিন আগে খড়কুটোতে স্রোতের মা সেজে ছিলেন এবং বর্তমানে পিলু ধারাবাহিকে আহিরের পিসির চরিত্র করছেন। তার জীবন সম্পর্কে আমরা কিন্তু এতদিন কিছু জানতাম না তবে সম্প্রতি একটি ভিডিওতে জানা গেল তার জীবনের অত্যন্ত কষ্টের কিছু কথা।
টলিউডের মানুষরা যে তাকে কী বাজে ভাবে বঞ্চিত করেছে সেটা নিজের কানে না শুনলে বিশ্বাস করা যায় না।বাবা মা দিদা, নাটকের সঙ্গে যুক্ত তাই ছোট থেকেই অভিনয় জগতের সঙ্গে ভালোভাবেই পরিচিত ছিলেন চৈতালী চক্রবর্তী। দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময় অভিনয় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বলে বাবা নিয়ে গেছিলেন শাঁওলী মিত্রের কাছে কিন্তু তাকে পাঁচ বছর ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি সেখানে শতরঞ্চি গোটাতেন আর বাকি ফাইফরমাশ খাটতেন কিন্তু একটু অভিনয়ের সুযোগ তাকে কেউ দেয়নি। পরবর্তীকালে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে নাটক করার সুযোগ দেন এবং সেখানে হিরোইন হয়ে তিনি সকলের মুখে ঝামা ঘষে দেন। অ্যাকাউন্টান্সি অনার্স পড়া শেষ করে নিজের প্যাশনের জন্য রবীন্দ্রভারতীতে ড্রামা ক্লাসে ভর্তি হন। সেখানে সহপাঠী বলেছিল তুই আগে দশ বছর ভিড়ের সীনে অভিনয় কর তারপরে হিরোইন হওয়ার কথা ভাববি। কিন্তু তখন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকে অভিনয় করে তিনি সকলের মুখ বন্ধ করে দেন।
এরপর একা এবং একা নাটকে অভিনয়ের জন্য পান west bengal government এর সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার। শ্বশুরবাড়ির লোকে পাত্তা দিত না কারণ তার স্বামী কম রোজগেরে ছিলেন কিন্তু যখন শ্বশুরবাড়ির লোকের সামনে সুনীল বন্দোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু পালিতের মতো লোকেরা তার প্রশংসা করেন তখন তাদেরও মুখ বন্ধ করে দেন চৈতালি।নিজেকে সব সময় সেরা ভাবতে ভালোবাসেন এবং বাবার কাছে পেয়েছেন এই শিক্ষা যে সবসময় নিজেকে সেরা ভাবতে হবে আর অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে হবে।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর তাকে বাড়িতে ডেকেছিলেন নিজের ছবিতে কাজ দেবেন বলে কিন্তু যখন চৈতালী জানান যে তিনি অন্তঃ’সত্ত্বা তখন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাকে ফিরিয়ে দেন এবং জানান যে পরে কাজ করাবেন। সেই সুযোগ আর হয়নি কোনদিনও কিন্তু চৈতালী দেবীর তাতে কোন আফসোস নেই। জন্মভূমি ধারাবাহিকে তার অভিনয় অনেকেরই মনে আছে। গেছিলেন পাঁচ দিনের পার্ট করতে তারপর পাঁচ বছর ধরে সেই পার্টে অভিনয় করেছিলেন।
ডিভোর্সের পর অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে কিন্তু হার মানেননি তিনি। একটা ছোট্ট গল্প বলে প্রতিবেদন শেষ করা যাক। শরৎচন্দ্রের মেজদিদি গল্পের অনুসরণে একটি একই নামের সিনেমা বার হয়েছিল। সেখানে মেজ দিদি চরিত্রটি করেছিলেন চৈতালী চক্রবর্তী। তাকে ডিরেক্টর মুখের উপর বলেছিলেন আপনাকে নেওয়ার আমার একটুও ইচ্ছা ছিল না। অন্য আরেকজন নামী অভিনেত্রীকে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হল তাহলে তাকে নিলেন না কেন তখন বলা হল আমার বেয়াই মশাই এই ছবির প্রডিউসার এবং আমার পুত্রবধূ আপনাকে কাস্ট করতে বলেছিলেন।তারপরে এমন অভিনয় করেছিলেন চৈতালী চক্রবর্তী যে ডিরেক্টর বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে আপনার কাজ এত ভাল হয়েছে যে আমার কিছু আর বলার নেই।