“হাম রাহে ইয়া না রাহে কাল, কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল”- ৯০ এর দশকের কন্ঠ। অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। পুরো নাম কৃষ্ণকুমার কুন্নথ। কিন্তু আপামর বিশ্ব তাঁকে চেনে কেকে হিসেবে।
মূলত এক গায়কের পরিচিতি হয় কণ্ঠ দিয়ে। কিন্তু এমন গায়ক খুব অল্প সংখ্যক রয়েছেন যাঁদের পরিচিতি হয় নাম দিয়ে। কেকে তেমন এক নাম। আলাদা করে পরিচয় লাগে না যাঁর। কারণ তিনি শুধুমাত্র একজন প্রফেশনাল গায়ক নন, একেবারে মাটির মানুষ ছিলেন। ব্যবহারই যাঁর কাছে মানুষ হওয়ার আসল কথা।
তিনি চলে গেছেন, তবু থেকে গেছে নাম। এই নাম প্রতিদিন ধ্বনিত হবে প্রতিধ্বনিত হবে লক্ষ লক্ষ কন্ঠে। আজ সেই কেকের জন্মদিন। ভারতীয় সঙ্গীত ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি ২৫টা বছর কাটিয়ে চলে গেলেন। আর বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হত ৫৪ বছর।
দেশজুড়ে যাঁর গলার মধুরতায় মুগ্ধ শ্রোতাকূল সেই কেকে জীবনে কোনদিন প্রথাগত সংগীতের তালিম নেননি বা নেওয়ার কথা ভাবেননি। তবুও অগণিত ভাষায় অগণিত গান গেয়ে অসংখ্য মানুষকে মুগ্ধ করেছেন নিজের গায়কীতে। ৫০০টির বেশি হিন্দি গানের পাশাপাশি তামিল, তেলেগু, মারাঠি, কন্নড়, বাংলা, মালায়ালম, গুজরাটি ও অসমীয়ার মতো একাধিক ভারতীয় ভাষায় গান গেয়ে নিজের কণ্ঠের জাদু ছড়িয়ে দিয়েছেন কেকে।
গান শুনে শুনে গান শেখা- এটাও একটা ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা। এই ক্ষমতার অধিকারী খুব কম মানুষ হতে পারেন। আর তার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন কেকে। কিশোর কুমার ছিলেন কেকের গানের অনুপ্রেরণা। এর অন্যতম একটা কারণ হলো তাঁর কিশোরদাও কোনওদিন গানের তালিম নেননি তবুও গোটা বিশ্বের কাছে সমাদৃত।
যদিও কেকের বাবা একবার গায়ককে মিউজিক স্কুলে ভর্তি করেছিলেন যাতে গানের শিক্ষা তাঁকে আরো সম্পূর্ণ করে তুলতে পারে। কিন্তু প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাত্র কয়েকদিন সেই স্কুল করার পর স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন কেকে। বাবা আর জোর করেননি কারণ তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন ছেলের গানের প্রতি প্যাশন রয়েছে যেটা তাঁকে বহুদূর নিয়ে যাবে।
কেকের মৃত্যু বিশেষ করে আঘাত দিয়েছে ৯০ দশকের সেই প্রতিটি ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েকে যাদের কৈশোর থেকে যৌবনে প্রবেশের সাথে জড়িয়ে ছিল কেকের গান। প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ সবেতেই তখন তাদের মননে মিশে একটাই কণ্ঠ কেকে। আর সেই ৩১ মে দিনটিতে প্রায় প্রত্যেকের টাইমলাইনে ছিল একটাই লেখা- একটা গোটা জেনারেশনের ছোটবেলাটা শেষ হয়ে গেলো!