শুধু বাংলা বিনোদন দুনিয়া নয় বলিউডেও এমন অনেক তারকাদের খুঁজে পেয়েছি আমরা যারা এক দুটো কাজের মধ্যে দিয়েই নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের। পাশাপাশি এমন অনেক তারকাদের পেয়েছি যারা দু-একটা কাজের পর হারিয়ে গেছেন স্বেচ্ছায় অথবা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেননি।
এই জনপ্রিয় অভিনেতা হলেন তেমনই এক অভিনেতা যিনি স্বেচ্ছায় অভিনয় দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন এক সময়। সঠিক অর্থে বলিউডের ‘পারফেকশনিস্ট’ বলা হয় তাকে। তিনি হলেন বর্ষিয়ান নায়ক সঞ্জয় মিশ্র।
প্রায় তিরিশ বছরের অভিনয় জীবন। মূল চরিত্র পেয়েছেন মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমায়। বাকি ছবিতে পার্শ্বচরিত্র হয়েই স্ক্রিন জুড়ে রাজত্ব করেছিলেন তিনি। কিন্তু সঠিক অর্থে বলিউডে ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ যদি কাউকে বলা যায়, সেটা তাকেই বলে থাকে দর্শকরা। শুধুমাত্র অভিনয় ক্ষমতার জোরেই দর্শকের মন জিতে নিয়েছিলেন তিনি। কারণ দর্শকরা মনে করেন এমন স্বতঃস্ফূর্ত হাস্যরস খুব কম অভিনেতার মধ্যে দেখা যায়।
তবে বহু মানুষ তার নামই জানে না। নাম না জানলে কী হবে বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বিহারের দ্বারভাঙার এই ছেলেকে মনে রেখেছে দর্শকরা। পড়াশোনায় একেবারেই মন ছিল না তার। দশম শ্রেণিতে দু’বার ফেল করা সঞ্জয় দিদাকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কারণ তার দিদা ছিলেন রেডিও স্টেশনের সংগীতশিল্পী।
১৯৯১ সালে মুম্বইয়ে পা রাখেন সঞ্জয়। টুকরো টাকরা কাজ পেলেও, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত লাইটিং, আর্ট ডিরেকশন এবং ক্যামেরার কাজ করেই সংসার চালাতেন তিনি। এমন দিনও গেছে যখন শুধুমাত্র বড়াপাও খেয়ে দিন কাটিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা। ১৯৯১ সালে ‘চাণক্য’ নামের একটি টেলিভিশন সিরিজে অভিনেতা সুযোগ পেলেন অভিনয়ের জন্য। ২৭টি শট বাতিল হওয়ার পর ২৮তম বার তাঁর অভিনয় ভালো লেগেছিল পরিচালকের।
১৯৯৫ সালে পূর্ণদৈর্ঘ্যের হিন্দি ছবিতে কাজ করলেন করলেন শাহরুখ খানের সঙ্গে। নাম ছিল ‘ওহ্ ডার্লিং! ইয়ে হ্যায় ইন্ডিয়া’। ২০০৫ সালে ‘বান্টি অউর বাবলি’ সঞ্জয়ের কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। একে একে ‘অল দ্য বেস্ট’, ‘ধামাল’, ‘গোলমাল’ ছবিতে দুর্দান্ত কাজ করলেন অভিনেতা।
‘অফিস অফিস’-এ কাজ করার সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সঞ্জয়। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সেই সময় ১৫ দিনের মাথায় মারা গেলেন বাবা। বাবার মৃত্যুর পর আর মুম্বাইয়ে না এসে ঋষিকেশ চলে গেলেন সঞ্জয়। এত বড় মাপের এক অভিনেতা কাজ করলেন ধাবায় অমলেট বানানোর। সেখানে তাকে দেখে ভিড় হতো। তবুও মন গলেনি তার। পরিচালক রোহিত শেট্টিই আবার সঞ্জয়কে বাধ্য করলেন বলিউডে ফিরে আসতে। ‘আঁখোঁ দেখি’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। ‘মাসান’ ছবির জন্য ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল লস অ্যাঞ্জেলস-এও পুরস্কার পেলেন তিনি। এমন আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া শিল্পী কিন্তু বড় বাজেটের চেয়ে কম বাজেটের ছবিই বেশি পছন্দ করেন করতে।