প্রতি বছর দুর্গাপুজো আসলেই আড়বেলিয়া গ্রামের প্রতিটি কোন ভরে ওঠে আনন্দ, উৎসবের আবহে। কিন্তু এ বছর, কিছুটা ভিন্ন চিত্র। অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু (Biswanath Basu) যিনি এই গ্রামে কাটিয়েছেন জীবনের অনেকটা সময়, এবারের পুজোর উচ্ছ্বাসে এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করছেন। পুজো মানে তাঁর জন্য নিজস্ব গ্রাম, যেখানে আত্মীয়স্বজনের ভিড়, হুল্লোড় এবং আনন্দের পরিবেশ। কিন্তু ২০২৪ সালের দুর্গাপুজো যেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
বিশ্বনাথ বলেন, “সাধারণত ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত আমরা মায়ের পুজো নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু অগস্ট থেকে যা ঘটেছে, তা আমাদের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।” তিনি জানান, এবারের পুজোতে পরিবারের সদস্যদের ফোনে কথা বলার সময়, অনেকেই আগের মতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন না। “এটা সত্যিই মন খারাপের। আমাদের বাড়িতে পুজোর প্রস্তুতি চলছে, কিন্তু তার মধ্যে এক অদ্ভুত দুঃখ রয়েছে।”
তিলোত্তমা কাণ্ডের প্রভাব এই মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ফলে সাধারণ মানুষের মনে এক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশ্বনাথের মতে, এই পরিস্থিতির কারণে আত্মীয়স্বজনদের একত্রিত হওয়ার আগ্রহও কমে গেছে। “এ বছর আত্মীয়রা ফোনে বলছেন, ‘দেখছি, না হলে পরের বার আসব’। এই মনোভাবটা পুজোর আনন্দকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে,” তিনি মন্তব্য করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, শুধু বিশ্বনাথই নন, তাঁর মতো অনেকেই এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত। কোয়েল মল্লিক, সুদীপা চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য সেলিব্রিটিরা জানান, এবারের পুজোতে নিয়ম মেনে হলেও, সেই পুরনো উল্লাস নেই।
আড়বেলিয়া গ্রামের পুজোয় উচ্ছ্বাসের অভাব
বিশ্বনাথের মতে, বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া এই পুজো, রাজ্যের পরিচয়কে বহন করে। “বাংলার নাম যখন বাইরে যায়, তখন গর্বিত হই। কিন্তু যখন কিছু খারাপ হয়, তখন দুঃখ অনুভব করি,” তিনি যোগ করেন। এবারের পুজোয় সেই দুঃখের ছাপ স্পষ্ট। নিউমার্কেটের পরিস্থিতি নিয়েও তিনি হতাশ। সেখানে ভিড় থাকলেও, “রোশনাই কম,” বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ব্যাক টু ব্যাক সিনেমা! ফের বড় পর্দায় ইধিকা, শাকিবের ‘প্রিয়তমা’ হয়ে ফের বড় পর্দায় ফিরছেন তিনি
অবশেষে, বসিরহাটের আড়বেলিয়া গ্রামের দুর্গাপুজো এবারে যেন এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ২০২৪ সালের পুজো, যখন উচ্ছ্বাসের অভাব, তখন এর প্রতিফলন সমাজের আবহে স্পষ্ট। তিলোত্তমা কাণ্ডের মতো পরিস্থিতি এই প্রেক্ষাপটে বাংলার পুজোর ঐতিহ্য এবং সমাজের সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে নতুন করে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে।