তিনি বাংলা ছবি স্বর্ণযুগের প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী কণিকা মজুমদার (Kanika Majumdar)। তিন কন্যার মনিহারায় মনিমালিকার চরিত্রে যার অভিনয়। আজও তাকে ভুলতে পারেনি বাঙালি। বহুবছর বাংলা বিনোদন জগতে দাপটের সাথে কাজ করার পর শেষ জীবনে কেউ মনে রাখেনি তাকে। জীবনের অন্তিম দিন গুলো কাটিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে।
১৯৩৫ সালে ময়মনসিংহের এক ব্রাহ্ম পরিবারে কণিকার জন্ম। এক অভিজাত ও পরিবারের মেয়ে। উচ্চশিক্ষিতা ও অসম্ভব ব্যক্তিত্বময়ী। সত্যজিৎ রায়ের নজর কাড়ে কণিকা মজুমদারের (Kanika Majumdar) এই বৈশিষ্ট্যগুলি। তাই তিন কন্যা সিনেমার মনিহারা-র জন্য প্রস্তাব দেন। তিন কন্যা এই অভিনেত্রীর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি।
তবে সত্যজিৎ রায়ের আগে এই অভিনেত্রীকে খুঁজে পেয়েছিলেন নীতিন বসু। তবে তখন পরিবারের আপত্তি থাকায় রাজি হননি। তাকে প্রস্তাব দেন পুনশ্চ ছবিতে কাজ করার। তিন কন্যার আগেই পুনশ্চ ছবির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ছবিটি পরে মুক্তি পায়। সত্যজিৎ রায়ের মনিহারায় মনিমালিকার চরিত্রে তার (Kanika Majumdar) অভিনয় বাঙালি ভুলবে না । এই ছবিতে তার প্রশংসা করেছেন বহু অভিনেতা।
কণিকা মজুমদার (Kanika Majumdar) অভিনীত জনপ্রিয় ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে আগুন, অগ্নিশিখা, প্রথম প্রেম, বসন্ত বিলাপ, তিলোত্তমা,প্রিয়তমা, রাগ অনুরাগ, জীবন সৈকতে, মেঘের পর মেঘ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রায় ৩০ টির মতো বাংলা ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। তার অভিনীত শেষ ছবি ছিল ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া পৃথিবীর শেষ স্টেশন।
উত্তম কুমারের বড় প্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন কণিকা মজুমদার। মহানায়কের সাথে চিড়িয়াখানা, সোনার খাঁচা, হার মানা হার, চাঁদের কাছাকাছি ছাড়াও বেশ কিছু ছবিতে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল তাকে। অভিনয় দক্ষতা ছাড়াও নাচে ও গানে পারদর্শী ছিলেন কণিকা মজুমদার (Kanika Majumdar)। বেতারেও মঞ্চে একসময় দাপটের সাথে কাজ করেছেন। মঞ্চে কড়ি দিয়ে কিনলাম ও বেতারের রক্তকরবীতে তার কাজ মনে রাখার মতো।
আরও পড়ুন: সূর্যের জন্য দাম হাঁকাল দীপা! পঞ্চাশ লাখের বিনিময়ে নিজের সন্তানের বাবাকে দুষ্কৃতীদের হাতে তুলে দিল সে
আক্ষেপ বাঙালি মনে রাখেনি তাকে। শেষ জীবনে তিনি কোথায় ছিলেন তা কেউ জানত না। সবকিছু থেকে সরে তিনি শেষে দিনযাপন করেছিলেন আলিপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে। শোনা যায় তিনি নিজেই বেছে নিয়েছিলেন বৃদ্ধাশ্রমের এই অন্তরাল জীবন। সেই বৃদ্ধাশ্রমেই ৮৪ বছর বয়সে ১৬ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে প্রয়াত হন তিনি (Kanika Majumdar)। তিনি চাইলেই শেষ বয়সে বিদেশে যেতে পারতেন মেয়ের কাছে। তার প্রয়াণের পরও কোন খবর প্রকাশিত হয়নি। তার প্রয়াণের কিছুদিন পর ধীরে ধীরে মৃত্যুর সংবাদ আসতে থাকে।