টেলিভিশনের পর্দা অনেক সময় এমন কিছু মুখকে সামনে আনে, যারা অল্পদিনেই দর্শকের হৃদয়ে পাকাপাকি জায়গা করে নেন। তেমনই একজন হলেন তরুণী অভিনেত্রী ‘আরাত্রিকা মাইতি’ (Aratrika Maity)। অভিনেত্রী হিসেবে শুরুটা হয়েছিল সান বাংলার ‘অগ্নিশিখা’ (Agnishikha) ধারাবাহিক দিয়ে। তাঁর প্রতিভা এতটাই স্পষ্ট যে শুরুতেই নজর কেড়েছেন প্রযোজক থেকে পরিচালকদের। জি বাংলার ‘খেলনা বাড়ি’ (Khelna Bari) ধারাবাহিক দিয়ে ঘরে ঘরে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।

এরপর ‘মিঠিঝোরা’ (Mithijhora) ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় দক্ষতা তাঁকে আরও জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। রাই আজ সবার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে, কিন্তু সম্প্রতি রাইয়ের চরিত্র বিদায় নিয়েছে ধারাবাহিক থেকে যা নিয়ে দর্শকদের বেজায় মন খারাপ। কিন্তু সব মন খারাপের মাঝেও খবর মিলেছে, আরাত্রিকা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আসন্ন ছবি ‘লহো গৌরাঙ্গের নাম রে’ তে যোগ দিচ্ছেন। এতো সাফল্য কি রাতারাতি আসে? এর পেছনে রয়েছে রাতদিন এক করা সংগ্রাম, যা হয়তো অনেকেরই অজানা।

মাত্র ২০ বছর বয়সে এই তরুণী ছোট পর্দায় নিজের একটা আলাদা জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন। এই অল্প বয়সেই যেভাবে তিনি নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছেন, তা অনেকের পক্ষেই ঈর্ষার হয়ে উঠতে পারে। শুরুর দিকে যা উপার্জন করেছেন, তা সঞ্চয় করেই সম্প্রতি কিনেছেন নিজের ফ্ল্যাট। এই সাফল্যে যেমন তিনি গর্বিত, তেমনই গর্বে চোখ ভিজেছে তাঁর পরিবারেরও। মেয়ে নিজের চেষ্টায় এভাবে জীবন সাজাবে, এমন স্বপ্নই দেখতেন তাঁর মা-বাবা, যা আজ বাস্তব।

তবে এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠিন এক লড়াইয়ের ইতিহাস। আরাত্রিকা ঝাড়গ্রামের এক দুস্থ পরিবারের মেয়ে, তাই জীবনের শুরুটাও ছিল সংগ্রামভরা। অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী ছিল তাঁদের সংসারে, কিন্তু তবুও নিজের স্বপ্নকে হারাতে দেননি আরাত্রিকা। ছোট শহর থেকে কলকাতায় এসে অডিশনে অংশ নিয়েছেন নিয়মিত। কখনো কাজ পেলে কোথায় থাকবেন, সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেও হার মানেননি বরং অভিনেত্রী হওয়ার জেদই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ তূর্যকে পারুলের হুশিয়ারি, রায়ানের দিকে হাত নয়! তূর্যের মুখোশ খুলতেই রায়ান-শিরীনের সম্পর্ক ভাঙনের মুখে! শত্রু নয়, এবার পারুলের বন্ধু হয়েই ক্ষতি করবে শিরীন!
এই কঠিন সফরে আরাত্রিকার পাশে সবসময় ছিলেন তাঁর মা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কলকাতায় আসার সময় তাঁদের থাকার মতো টাকা পর্যন্ত ছিল না। কখনও রিলেটিভদের বাড়ি, কখনও ভাড়া করা ছোট ঘরে রাত কাটাতেন মা-মেয়ে। আজ যখন মেয়ে নিজের উপার্জনে শহরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছে, তখন সেটাই তাঁর কাছে স্বপ্নপূরণের অনুভূতি। এত চেনা কষ্টের পর জীবনে এমন উজ্জ্বল আলো দেখে তাঁর মা ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
বর্তমানে আরাত্রিকা শুধুমাত্র একটি পরিচিত মুখ নন, তিনি হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার নাম। সমাজ মাধ্যমে অনুরাগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তার ছবি নিয়ে রীতিমত মহানায়িকার সাথে তুলনাও চলে। এই ভালোবাসা, এই পরিচিতির পেছনে যে ত্যাগ, পরিশ্রম এবং মানসিক জেদ রয়েছে, সেটাই তাঁকে আলাদা করে তোলে। নিজের স্বপ্নকে বাস্তব করতে যে মেয়েটি সমস্ত বাধা অতিক্রম করে এখানে এসেছে, আজ সে বাংলার ছোটপর্দার অন্যতম পরিচিত নাম।