বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের কথাতে যাঁদের নাম এলেই দর্শকের মনে আলাদা এক অনুভূতি ফিরে আসে, তাঁদের মধ্যে অভিনেত্রী ‘দেবশ্রী রায়’ (Debashree Roy) নিঃসন্দেহে অন্যতম। জনপ্রিয়তা, সম্মান এবং অভিনয়ের দক্ষতা মিলিয়ে তিনি ছিলেন এক অন্য ধরণের তারকা। শুধু নায়িকা হিসেবে নয়, অভিনয়ের ভাষা থেকে অভিব্যক্তি, পরিণত ব্যবহার আর পর্দার উপস্থিতি তাঁকে হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে সময়ের থেকে আলাদা এক পরিচয়ের প্রতিনিধি। আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি পর্দায় আসতেন, সেটা আজও বহু দর্শকের মনে ছাপ ফেলে রেখেছে।
এত বড় কেরিয়ার, এত বিখ্যাত সহ-অভিনেতা, সব কিছুর মাঝেও দেবশ্রী রায় নিজের অভিনয়জীবনকে কখনও স্রেফ সাফল্যের তালিকা হিসেবে দেখেননি। তাঁর মতে, জীবনের কোনও ক্ষেত্রেই গ্যারান্টি বলে কিছু নেই। ভুল এক মুহূর্তে দিক পাল্টে দিতে পারে সবকিছু। অভিনয় তাঁকে শিখিয়েছে ঝুঁকির ভেতর দিয়েই বাঁচার সাহস আসতে পারে। তিনি মনে করেন, জীবনটা এমন এক জায়গা যেখানে নিরাপদ ভাবে থাকা যায় না, বরং শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজের ভারসাম্য ধরে রাখাই আসল পরীক্ষা!
তাঁর দীর্ঘ কেরিয়ারে বহু তারকার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি আর সেই সব জুটির মধ্যে দর্শকের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে তাপস পালের সঙ্গে তাঁর অনস্ক্রিন উপস্থিতি। কোনও বাড়তি নাটকীয়তা নয়, বরং খুব স্বাভাবিক এক পরিচিত সম্পর্ক। যেটা দেখলে মনে হতো পর্দার গল্প যেন নিজের আশেপাশের মানুষের জীবনের অংশ। এই জুটির জনপ্রিয়তা ছিল এমন, যা শুধু বিনোদন নয়, গল্পের ঘরোয়া অনুভূতি দিয়ে তৈরি হত একধরনের আত্মীয়তা।
প্রসঙ্গত, অভিনয়জীবনের বাইরে এসেও থেমে থাকেননি তিনি। একটা সময় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন, বিরতি নিয়েছিলেন অভিনয় থেকে। আবার বহু বছর বাদে ফিরে এসেছেন পর্দায়। অন্যদিকে, অবহেলিত পথ পশুদের নিয়ে কাজ করা এনজিও, তাঁর জীবনের বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। একাধিক পরিচয়, একাধিক পথচলা, কিন্তু দেবশ্রীর চোখে এগুলো নতুন প্রচেষ্টা নয় বরং জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি শক্তি।
আরও পড়ুনঃ প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমের নতুন গল্প নিয়ে আসছে ‘কমলা নিবাস’, জুটিতে এবার দেবশঙ্কর ও সোহিনী! ধারাবাহিক নিয়ে উৎসাহী দর্শকরা
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি তাই বলেছেন, ‘সাফল্য বা জনপ্রিয়তার আড়ালে লুকিয়ে নেই কোনও নিশ্চিত পথ। ঝুঁকি নিয়েই এগোতে হয় আর সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই সাহস জন্মায়।’ তাঁর কথাতেই স্পষ্ট যে, যাঁরা মনে করেন সবকিছু আগেই পরিকল্পিত হয়ে থাকে, তাঁরা ভুল ভাবেন। জীবনের পথ কখনওই পুরোটা জানা সম্ভব না। তা সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই তাঁর বিশ্বাস আর সেই জায়গাটাই তাঁকে আজও আলাদা করে দেয়।
