জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“রোজ রোজ মেকআপে একদিন ফর্সা হয়ে যাবেন” মেকআপ রুমে তীব্র অপমানিত হন! গায়ের রঙ স্বপ্নপূরণের পথে কাঁটা হয়ে উঠেছিল! অকপট শ্রুতি

এক সময় টেলিভিশনের পর্দায় নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকে শেষবার দেখা গিয়েছিল তাঁকে, তারপর যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যান লাইমলাইট থেকে। সময়ের সঙ্গে বদলায় ভক্তদের মনোভাবও। একসময় যাঁরা হাততালি দিতেন, তাঁরাই সমালোচনার তির ছুড়েছেন কখনও গায়ের রং নিয়ে, কখনও ব্যক্তিগত জীবন টেনে। কিন্তু অভিনেত্রী ‘শ্রুতি দাস’ (Shruti Das) হার মানেননি! দীর্ঘ বিরতির পর ছোট পরিসরে অভিনয় করেই চমকে দিলেন দর্শকদের—‘ডাইনি’ ওয়েব সিরিজে মিমি চক্রবর্তীর পাশে তাঁর উপস্থিতি যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, প্রভাব ফেলেছে গভীর ছাপ। কিন্তু অভিনয়ে আত্মপ্রকাশটা যেন শ্রুতি দাসের জীবনে আচমকাই ঘটেছিল।

না ছিল কোনো দীর্ঘ প্রস্তুতি, না ছিল অডিশনের লাইনে দাঁড়ানোর ইতিহাস। বরং ভাগ্যই যেন তাঁকে তুলে এনেছিল আলোয়। আর তাই আজ যখন তিনি দেখেন, তরুণ প্রজন্মের কতজন শিল্পী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অডিশন রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন তাঁর মনে জেগে ওঠে গভীর শ্রদ্ধা। নিজের প্রতি সৎ থেকে তিনি স্বীকার করেছেন, তিনি সেই লড়াইটা তখন করেননি, যা আজকের দিনে এসে করতে হচ্ছে তাঁকে। টেলিভিশনের শেষ দৃশ্যপট কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর আগে। এরপর যা কাজ এসেছিল, তা হয় উপযুক্ত ছিল না, নয়তো তার মধ্যে আগ্রহ জাগেনি।

Bengali actress Shruti Das, Director Producer Swarnendu Samaddar, Not getting any television offer, backlash for getting married with producer, New movie, Amar Boss, Dainee, Hoichoi, Web Series, বাঙালি অভিনেত্রী শ্রুতি দাস, পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার, কাজের প্রস্তাব পাচ্ছেন না, প্রযোজককে বিয়ের কারণে কটাক্ষ, নতুন ছবি, আমার বস, ডাইনি, হইচই, ওয়েব সিরিজ

সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে যখন ভর করে দাঁড়ায়, তখন বোঝা যায় নিয়মিত আয়ের গুরুত্ব কতটা প্রবল। এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ হইচইয়ের ‘ডাইনি’ সিরিজে অভিনয় করে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন শ্রুতি। কিন্তু দর্শকের প্রশংসা সত্ত্বেও সে আলো আর প্রসার পায়নি, বরং বাস্তব যেন তাঁকে আবারও আড়ালেই রেখেছে। তিনি মনে করেন উড়ান শুরু মানেই উড়ন্ত যাত্রা নয়। কয়েক বছরের মধ্যেই থেমে গিয়েছিল সেই গতি। আজ, ২০২৫-এর মাঝামাঝি এসে তিনি নিজেই স্বীকার করছেন—শুরুতে না পাওয়া স্ট্রাগেলটাই যেন এখন তাঁর চারপাশ ঘিরে ফেলেছে।

পেশাগত জীবনের দীর্ঘ এক নিরবতা তাঁকে দাঁড় করিয়েছে এক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি। টেলিভিশনের গ্ল্যামার জগতে তিনি ছিলেন এক আলাদা পরিচিতি। কিন্তু গায়ের রং যেন বারবার হয়ে উঠেছে এক অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা। শ্রুতি আজও মনে রেখেছেন সেই মেকআপ রুমের অপমানজনক মন্তব্য, সেই প্রতিদিনের চাহনি যা তাঁকে মনে করিয়ে দিত তিনি ‘চিরাচরিত সৌন্দর্যের’ সংজ্ঞায় পড়েন না। এমনকি প্রযোজক, সহকর্মী কিংবা কলাকুশলীদের অনেকেই তাঁর প্রতিভার চেয়ে বেশি নজর দিয়েছেন তাঁর গায়ের রঙে। তবে সেই প্রতিটি অপমান আজ পরিণত হয়েছে এক দৃঢ় অবস্থানে পৌঁছনোর জেদে।

shruti das

‘ডাইনি’ ওয়েব সিরিজে স্বল্প উপস্থিতির পরও দর্শকের ভালোবাসা পেলেও, শিল্পীর কাছে এখনও পৌঁছায়নি নতুন কোনও কাজের ডাক। শ্রুতি বলেন, অভিনয়ই তাঁর একমাত্র জীবিকা, আর সেই জীবিকাই যখন মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন জীবনের প্রতিটি দিন হয়ে ওঠে নতুন এক লড়াই। কিন্তু সেই লড়াইয়ে তিনি একা নন। পাশে রয়েছেন তাঁর জীবনসঙ্গী, যাঁকে নিয়ে অনেকেই মনে করেন, শ্রুতি কেরিয়ারে এগিয়েছেন তাঁর জোরে। অথচ বাস্তব বলছে, সেই মানুষটাই একদিন তাঁকে প্রথম অডিশনে রিজেক্ট করেছিলেন। তবে ভাগ্যের পরিহাস, আজ তিনিই শ্রুতির জীবনের সবচেয়ে বড় ভরসা।

শ্রুতি এও মনে করিয়ে দেন, অনেকেই ভাবে তাঁর স্বামী—পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের জন্যই তাঁর কেরিয়ার গড়ে উঠেছে। অথচ তাঁর প্রথম অডিশনে স্বর্ণেন্দুই তাঁকে নাকচ করে দিয়েছিলেন। তখন শ্রুতির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এক সহকর্মী, যিনি বিশ্বাস করেছিলেন, ত্রিনয়নী চরিত্রটি কেবল শ্রুতিকেই মানায়। আজ সেই বিশ্বাসই তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বর্ণেন্দু অবশ্যই তাঁর পাশে থেকেছেন, কিন্তু শ্রুতি জানেন, নিজের লড়াই তিনি নিজেই লড়েছেন, সব সময়েই। শ্রুতি বিশ্বাস করেন, প্রত্যাখ্যান কখনও তাঁর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি।

বরং সেই প্রত্যাখ্যানই তাঁকে আরও বেশি আত্মনির্ভরশীল করেছে। একসময় যাঁরা কটাক্ষ করতেন, আজ তারাই সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়—সকলেই আজ পাশে থাকার দাবিদার। অথচ যেদিন শিল্পজগৎ তাঁকে দাগিয়ে দিয়েছিল, সেদিন এইসব মুখ অনেকটাই অচেনা ছিল। তবু থেমে থাকেননি শ্রুতি। ঈশ্বরে বিশ্বাস আর নিজের শিল্পীসত্তার প্রতি শ্রদ্ধা—এই দুটোকে আঁকড়ে ধরেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। তিনি জানেন, তাঁর গায়ের রংই যদি কারও চোখে সমস্যা হয়, তবে সেই চোখের দৃষ্টিই সংশোধনের প্রয়োজন।

আজও নতুন কাজের অপেক্ষায়, তবে হতাশ নন। তবুও শ্রুতি ভরসা রাখেন ঈশ্বরে আর নিজের সৎ চেষ্টায়। মনে করেন, সময় যতই কঠিন হোক না কেন, পরিশ্রম ও বিশ্বাস একদিন না একদিন ফল দেবে। আজ তাঁর সেই আত্মীয়রাই ফোন করে খোঁজ নেন, যাঁরা একসময় বলেছিলেন ‘মেয়েকে কোন লাইনে নামলে’? সময় বদলেছে, বদলেছে পরিচয়। কিন্তু শ্রুতির পরিচয় আজ শুধুই একজন ‘কালো গায়ের অভিনেত্রী’ নয়, বরং একজন আত্মবিশ্বাসী, স্পষ্টবক্তা, এবং নিজের অবস্থানকে গড়ে নেওয়া এক সংগ্রামী শিল্পী।

Piya Chanda