জীবনে এমন কিছু সম্পর্ক থাকে, যাদের নাম নেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না— কারণ তারা থেকে যায় অনুভূতির গভীরে। কিছু মানুষ থাকেন, যাঁদের চলে যাওয়া আমাদের ভেতরটাকে আমূল বদলে দেয়, নতুনভাবে ভাবতে শেখায় জীবনের অর্থ নিয়ে। ঠিক তেমনই, ঐন্দ্রিলা শর্মার (Aindrila Sharma) মৃ’ত্যুও যেন জীবনের গতিপথই বদলে দিয়েছিল অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীর (Sabyasachi Chowdhury)। যিনি একসময় ‘মহাপিঠ তারাপীঠ’-এর বামাক্ষ্যাপা চরিত্রে অভিনয় করে গভীরভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে, তিনিই আজ বলছেন— রীতিনীতি বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে আর বিশ্বাস রাখেন না!
একসময় যিনি তারা মায়ের পায়ে প্রার্থনা করতেন প্রেমিকার আরোগ্যের জন্য, সেই সব্যসাচী এখন ক্রমে সরে গেছেন সেই বিশ্বাসের জগত থেকে। তাঁর নিজের ভাষায়, “মানি না তবে, সেগুলি জানতে আগ্রহী। যদিও বিশ্বাস করি কোনও এক জাগতিক শক্তির অস্তিত্ব রয়েছে।” প্রসঙ্গত, তারাপীঠ একসময় ছিল সব্যসাচীর প্রায় দ্বিতীয় বাড়ি। বামদেবের বাড়িতে তাঁর যাতায়াত ছিল অবাধ। মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সাধকের পরিবার— সবাই চিনতেন তাঁকে।
এমনকি বাইরে থেকে দর্শনার্থীরাও তাঁকে সামনে পেয়ে অবাক হয়ে যেতেন। কিন্তু আজ সেই সম্পর্কেও যেন এক অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ঐন্দ্রিলার মৃ’ত্যুর পর থেকেই সব্যসাচী যেন ক্রমে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। একদিকে ব্যক্তিগত ক্ষতি, অন্যদিকে ঈশ্বরের প্রতি ক্ষোভ— সব মিলিয়ে বদলে গেছে তাঁর জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি। উল্লেখ্য, একসময় প্রেমিকার জীবনরক্ষার আশায় মায়ের পায়ে পুজো দিতেন প্রতিদিন। স্টার জলসায় ‘মহাপিঠ তারাপীঠ’-এ অভিনয়ের সময়ই তাঁর কাছে তারা মা যেন হয়ে উঠেছিলেন জীবনের আশা।
ঐন্দ্রিলা মা’রণ রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন, আর সেই সময়ই সব্যসাচী নিরন্তর প্রার্থনা করতেন— শুধু যেন সে ফিরে আসে। কিন্তু দীর্ঘ লড়াইয়ের পর প্রিয়জনকে হারানোর পর তাঁর মনে জন্ম নেয় এক নিঃশব্দ অভিমান। মা-ই কথা রাখলেন না— সেই আঘাত থেকেই আজও যেন মুক্ত হতে পারেননি তিনি। বর্তমানে বড়পর্দায় ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’-র চরিত্রে ফিরছেন সব্যসাচী। বাস্তবের সাধকদের সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁদের জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করছেন। তবু আধ্যাত্মিকতা নিয়ে তাঁর ভাবনা এখন অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি।
আরও পড়ুনঃ ডাকাত দলের তা’ণ্ডবে রণক্ষেত্র বসু বাড়ি, ঠাম্মির মাথায় ব’ন্দুক রেখে লুটের চেষ্টা! বীরত্বে ডাকাতদের কুপোকাত করল পারুল-রায়ান! শিরীনের মায়ের ষড়’যন্ত্রে এবার মৃ’ত্যুর মুখে পারুলের বাবা! ‘পরিণীতা’র টানটান পর্ব!
তিনি বলেন, “কোনও রীতিতে বিশ্বাসী নই। কিন্তু যেটা নিয়ে কাজ করছি, সেটা বই পড়ে জানব, এটা চাই না।” স্বভাবে শান্ত, সংযত, অথচ ভিতরে জমে থাকা শূন্যতা যেন এখনই তাঁর নতুন পরিচয়। ঐন্দ্রিলার স্মৃতি আজও জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সঙ্গে আছে। এক সময় যে ভালোবাসা তাঁকে আধ্যাত্মিকতার দিকে টেনেছিল, আজ সেই ভালোবাসার হারানো পরিণতিই হয়তো তাঁকে নির্লিপ্ত করেছে ধর্মের প্রতি। বামাক্ষ্যাপার চরিত্রে অভিনয় করলেও, বাস্তব জীবনের সব্যসাচী আজ শুধুই খুঁজে চলেছেন নিজের ভিতরের উত্তর— ঈশ্বর কেন কথা রাখেন না।