জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

‘লোকের গাড়ি, বাড়ি ভাঙতাম’, নেশামুক্তির ১৭ বছরে অকপট অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেতা অনিন্দ্য চ্যাটার্জী, যিনি ছোট পর্দা, বড় পর্দা এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সমানভাবে সক্রিয়। নিজের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় তৈরি করেছেন হাজার হাজার ভক্ত। তিনি ‘গাঁটছড়া’ ধারাবাহিকে রাহুল চরিত্রে অভিনয় করে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছেন। তবে তার জীবনের পথচলা সহজ ছিল না; দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তিনি মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এবং সফলভাবে সেই অন্ধকার অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

অভিনেতা ও পরিচালক অনিন্দ্য চ্যাটার্জীর ব্যক্তিগত জীবনের একটি অধ্যায় নিয়ে এই কথা তিনি প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর আগে তিনি মাদকাসক্তির সঙ্গে লড়াই করেছেন এবং নেশামুক্ত হয়েছেন। সেই সময় তিনি মাদকের টানে চুরি করেছেন এবং অন্যের গাড়ির লক ভেঙেছেন বলে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। তবে এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বের করে এনে আজ তিনি একটি সুস্থ ও স্থিতিশীল জীবন যাপন করছেন। যতই তার আসল জন্মদিন ডিসেম্বরে হোক না কেন আজকের দিনেই অর্থাৎ ২৩ সে জানুয়ারি যেন তাঁর পুনর্জন্মের দিনে। কারণ এই বিশেষ দিনেই তার নেশামুক্তি ঘটেছিল।

এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লম্বা পোস্ট শেয়ার করেন অনিন্দ্য, যেখানে নেশা মুক্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা কিরেছেন তিনি। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কালকে ২৩শে জানুয়ারি। আমার জন্মদিন। এই জন্মদিনটাই আমার সবচেয়ে কাছের। কেন? কারণ কালকে আমার নেশামুক্তির ১৭ বছর। ২৯শে ডিসেম্বর তো বায়োলজিক্যাল বার্থডে। কিন্ত কালকের দিনটা আমার কাছে অনেক অনেক বেশি স্পেশাল। আমার কাছে এখনও জলের মতো স্পষ্ট ২০০৮ সালে আজকের এই দিনটা। আর দেখতে পাই বলেই হয়তো আজকে এটা লিখতে পারছি। ব্যাঙ্কসাল কোর্টে হাজিরা দিয়ে আমাকে রিহ্যাবে ফিরতেই হতো, ৯টার বনগাঁ লোকাল আর আমাকে যেতে হত হাবড়া। সাথে ছিল শেষবারের মতন নেশা করব বলে একটু ব্রাউন সুগার, পাতি বাংলায় কয়েকটা পাতা আর একটা সিরিঞ্জ, একটু তুলো একটা চামচ।

হাবড়া স্টেশনে নেমে একটু এগোলেই সেই রিহ্যাব যেখান থেকে আমার ভালো থাকার লড়াই শুরু হয়েছিল। তার আগে প্রায় ২৮ বা ২৯ টা ডিটক্স আর রিহ্যাব হয়ে গেছে । যেদিন ছাড়া পেতাম সেদিনকেই রিলাপস, এরম একটা প্যাটার্ন ছিল। ৬/৭ বছর ধরে অনবরত ঘুরতে থাকা একটা বৃত্ত। নয় বাইরে নেশা করছি নয় তালা চাবির ভিতরে ভালো আছি। তালা চাবির বাইরে বেরোলেই আবার নেশা। না নিজে বিশ্বাস করতাম যে আমি কোনদিন ভালো হতে পারব, না আমাকে কেউ বিশ্বাস করত যে আমি কোনদিন নেশা ছেড়ে দেব। উত্তর কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারের আর কতই বা ক্ষমতা? বাড়ির সব কিছুই মোটামুটি ততদিনে প্রায় শেষ!’

এখানেই থেমে থাকেননি এদিন আরও লেখেন, ‘মায়ের সোনার গয়না হোক বা বাবার সঞ্চয়, এরপরে বাইরের লটরবহর তো আছেই। লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, কাঁসার জিনিস তখন আমার কাছে সোনার মতোই দামী। যে কোনও গাড়ির লক খুলতে লাগতো ঠিক তিন মিনিট। একটা নোকিয়ার মোবাইল মানে ক্যাশ ২/৩ হাজার। সেটাই অনেক তখন আমার কাছে, এরম একটা সময় আমি আমি বুঝতে পারছিলাম এভাবে যদি চলতে থাকে আমি ২৮ বছর অবধিও টানতে পারব না আর চোখের সামনে চারটে ইউজিং পার্টনারকে পরপর মরতে দেখে একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। এতটাই বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলাম যে আমার সেই রিহ্যাবে যাওয়া আর সেখানে আবার কয়েকমাস চার দেওয়ালের মধ্যে থাকা ছাড়া আমার আর কোনও উপায় ছিল না।’

অভিনেতা তাঁর পোস্টে আরও বলেন, ‘আর এই উপলব্ধিটাই আমাকে একটু হলেও সাহস জুগিয়ে ছিল। এভাবেই আমার ভালো থাকার শুরু । শুরুটা সত্যি কঠিন ছিল। না কেউ বিশ্বাস করতো, না নিজে বিশ্বাস করতাম যে নেশা করা ছেড়ে দেব। আজকে যখন রাস্তায় লোকে সেলফি তুলতে চায়, অটোগ্রাফ চায়, ভালোবাসা দেয় তখন আমি নিজেকে দেখি আর পুরোটাই কেমন স্বপ্নের মতন লাগে। আদৌ এটা সত্যি হচ্ছে তো? কোথায় সেই ছেলেটা আর কোথায় আজকের আমি! আমার লড়াই সেই বাঁদরটার সাথে যে আজকেও আমার মধ্যে আছে। যাকে আমাকে প্রতিনিয়ত বশে রাখতে হয়।’ তিনি জানান তাঁর কাছের লোকেরা সবসময় তাঁর পাশে ছিলেন। বাবা মা তাঁর এই বদল, সফলতা দেখে গেছেন, বোন গর্ব করেন আজ তাঁকে নিয়ে। এটুকুই চেয়েছিলেন তিনি।

Piya Chanda