সরস্বতী পুজো মানেই বিদ্যার দেবীর আরাধনা, পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল, ধুনুচি নাচ, আর সাদা-হলুদের মেলবন্ধন। এই সময়ে শহর কলকাতার প্রতিটি কোণ যেন সেজে ওঠে। তবে শুধু আনন্দ নয়, পুজোর সময়ে নানা বার্তাও উঠে আসে মানুষের মুখে। পাড়ার সরস্বতী পুজো তাই শুধু একদিনের আরাধনা নয়, কখনও কখনও তা হয়ে ওঠে সামাজিক সচেতনতার মঞ্চ। কিন্তু এ বছর সরস্বতী পুজো নিয়ে একটু অন্য রকম পরিকল্পনা করেছেন অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল।
প্রতি বছর সরস্বতী পুজোতে চৈতি ঘোষালের (Chaiti Ghoshal) বাড়িতেও বড় করে উৎসব হয়। পরিবারের সকলে মিলে আয়োজন করেন ঘরোয়া পুজো। কিন্তু এ বছর সেই চিত্র একটু আলাদা। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে যে চৈতি দুর্গোৎসব এবং লক্ষ্মী পুজোতে অংশ নেননি, এবার সরস্বতী পুজোতেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তাঁর বাড়িতে সরস্বতীর আরাধনা হচ্ছে ঠিকই, তবে চৈতি নিজে সেই পুজোয় অংশ নিচ্ছেন না। এ বছর বাড়ির সরস্বতী পুজোর চেনা হইচই নেই।
তবে সরস্বতী বন্দনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি চৈতি। নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে নারীর কথাই তুলেছেন তিনি। কোচবিহারে সরস্বতী পুজোর দিন মঞ্চস্থ হবে চৈতির নাটক ‘খেলাঘর’। এটি হেনরিক ইবসনের বিখ্যাত নাটক ‘এ ডল’স হাউস’-এর বাংলা সংস্করণ। চৈতির মতে, এই নাটক নারীর অধিকার, মুক্তি এবং সমাজে নারীর অবস্থান নিয়ে কথা বলে। নাটকের মাধ্যমে চৈতি তুলে ধরেছেন নীরা নামের এক নারীর গল্প, যে সংসার ও সমাজের গণ্ডি ভেঙে নিজের প্রশ্ন তোলে।
‘খেলাঘর’ নাটকের একাধিক সংলাপ বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন চৈতি। বিশেষ করে আরজি কর-কাণ্ডের পর নারীদের অধিকার নিয়ে এই নাটক যেন আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নাটকের সংলাপ, “যেটা কেউ জানে না, সেটা অন্যায় হয় কীভাবে?”—এই প্রশ্ন যেন বাস্তবের অনেক ঘটনা স্পষ্ট করে তোলে। চৈতির মতে, এই সংলাপগুলি আজকের দিনে খুব জরুরি।
আরও পড়ুনঃ “এমন অনেক কথা আছে যেগুলো আমার স্ত্রী জানতেন না, সম্পর্কে থাকতে গেলে অনেক মানিয়ে নিতে হয়” অকপট অঞ্জন দত্ত
চৈতির পুজোতেও নারীর কথাই প্রথম। তাঁর মতে, “লক্ষ্মীপুজোতেও বলেছিলাম, লক্ষ্মীও জাস্টিস চান। এবার সরস্বতী পুজোতেও সেটাই বলব। নাটকই আমার সরস্বতী বন্দনা। নারীর কথা বলাই আমার পূজা।” তাই সরস্বতী পুজোতে নিজের বাড়ির মঞ্চ ছেড়ে অন্য মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে বার্তা দিচ্ছেন চৈতি, আর এই পদক্ষেপই তাঁকে আলাদা করে তুলেছে।