টলিউডের বিশিষ্ট অভিনেতা ‘কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়’কে (Kaushik Banerjee) অনেকেই তাঁর দাপুটে চরিত্রদের সূত্রে চেনেন, কিন্তু তাঁর ভাবনা-চিন্তার গভীরতা শুধু অভিনয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পীসমাজ এবং রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সেখানে কৌশিকের অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট এবং কিছুটা সংযত। তিনি মনে করেন, অভিনয়ে রাজনীতিক এবং বাস্তবের রাজনীতিক, দুটির চরিত্র এক হয় না! তাই একটিকে অন্যটির সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে শিল্পের স্বাভাবিক পথচলা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
অভিনেতার বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে যোগ্যতার প্রশ্ন। তাঁর অভিজ্ঞতায় দেখা, অনেক শিল্পীরা রয়েছেন যাঁদের সমাজ থেকে শুরু করে দেশ বা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কোনও গভীর ধারণা নেই! কোনদিনও পেপার কাগজ ধরেই দেখে না, অথচ রাজনৈতিক আশীর্বাদে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছেন, অবলীলায় ভোটে জিতে যাচ্ছেন! এই প্রবণতাকে তিনি উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন। তাঁর মতে, জনপ্রিয়তা আর ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা এক জিনিস নয় আর সেই ফারাকটা না বুঝলে গণতন্ত্রেরও ক্ষতি হতে পারে!
রাজনীতিতে শিল্পীদের অংশগ্রহণকে তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেন না। কিন্তু সেখানে প্রস্তুতির অভাব থাকলে তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এমনটাই তাঁর ভাবনা। একজন অভিনেতা যেমন চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নেন, দীর্ঘদিন সেই চরিত্রের জন্য পড়াশোনা বা বাস্তব মানুষের থেকে অনুপ্রেরণা পান, তেমনই জনজীবনের দায়িত্ব নিতে গেলে সমাজ সম্পর্কে ন্যূনতম বোঝাপড়া থাকা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। শুধু পরিচিত মুখ হওয়ার কারণেই ভোট পাওয়া উচিত নয়, এই ধারণার বিরুদ্ধেই তাঁর আপত্তি।
এই প্রসঙ্গে তাঁর পারিবারিক অবস্থানও আলাদা করে উল্লেখযোগ্য। স্ত্রী লাবণী সরকারের মতো কৌশিকও মনে করেন, রাজনীতির অযথা উপস্থিতি অনেক সময় বিনোদনজগতের পরিবেশকে দূষিত করে। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই এই একই বিষয়ে লাবণীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘রাজনীতি টলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে, কলঙ্কিত করছে প্রতিদিন!’ সৃজনশীলতার জায়গায় বিভাজন আর ক্ষমতার হিসেব ঢুকে পড়লে শিল্পীর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়, এই আশঙ্কা দুজনেরই।
আরও পড়ুনঃ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে শানুর বিরুদ্ধে পরকী’য়ায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন প্রাক্তন স্ত্রী! তিন সন্তানের মায়ের বিরুদ্ধে ৫০ কোটির মানহানির মামলা গায়কের! অর্থের পরিমাণ দেখে তাজ্জব সবাই
ফলে তাঁরা দুজনেই শিল্পকে তার নিজস্ব পথে চলতে দেওয়ার পক্ষপাতী। উল্লেখ্য, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে কোনও চরমপন্থা নেই। আছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হওয়া বাস্তববোধ। তিনি রাজনীতির বিরোধিতা করেন না বরং প্রশ্ন তুলেছেন যোগ্যতা, দায়িত্ববোধ আর সচেতনতার অভাব নিয়ে। অভিনয়জগতের একজন মানুষ হিসেবে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা করে গুরুত্ব পাচ্ছে। তার কারণ আবেগের নয় বরং সময়কে বুঝে বলা এক সংযত মতামত।
