বাংলাদেশের (Bangladesh Unrest) সাম্প্রতিক অস্থিরতা এপারের শিল্পীমহলেও এক ধরনের অস্বস্তি আর মনখারাপ ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেশী দেশের সাংস্কৃতিক পরিসরে যখন এমন ভয়াবহ হিংসার খবর ভেসে আসে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে চারিদিক অশান্ত থাকলে নিজের ঘরও কি নিশ্চিন্ত থাকতে পারে? এই প্রেক্ষিতেই টলিউডের (Tollywood) বহু শিল্পী তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কথায় বারবার উঠে আসছে একটাই বার্তা যে ধ্বংস নয়, শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশই হওয়া উচিত যেকোনও সমাজের আসল পরিচয়।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশের পরিচিত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির উপর হামলার খবর। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃ’ত্যুর প্রতিবাদে, সংবাদপত্রের দফতর থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান, কোনোটাই রেহাই পায়নি! এই পরিস্থিতি শুধু রাজনৈতিক বা সামাজিক নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গভীর ক্ষতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ, শিল্পচর্চার জায়গাগুলিই তো মানুষের মন নরম করে আর বিভাজনের বদলে সংযোগ তৈরি করে।
সেই জায়গাগুলিই আক্রান্ত হলে হতাশা স্বাভাবিক। এমন আবহেই অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের (Koel Mullick) প্রতিক্রিয়া বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। বছরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি এই উত্তাল বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারছেন না! তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, বিনোদনের জগৎ সব ধরনের হিংসা আর সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। সেখানে যদি মৌলবাদ বা আগ্রাসনের ছায়া পড়ে, তাহলে তা শুধু একটি দেশের ক্ষতি নয় বরং গোটা শিল্পজগতের জন্যই দুঃসংবাদ! কোয়েলের কথায় কোনও চড়া ভাষা নেই, আছে শান্ত অথচ দৃঢ় হতাশা।
এদিকে, কোয়েলের এই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তাঁর পর্দার চরিত্রের একটা অদ্ভুত মিলও টেনে এনেছেন অনেকে। কারণ, আসন্ন বড়দিনে মুক্তি পেতে চলা ‘মিতিন মাসি’ নতুন গল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন যে বাস্তবের এমন পরিস্থিতিতে তাঁর চরিত্র প্রথমে দোষীকে চিহ্নিত করত, তারপর চেষ্টা করত যাতে নিরপরাধ মানুষের প্রাণ আর স্বপ্ন দুটোই বাঁচে। এই মন্তব্য যেন ইঙ্গিত দেয় যে হিংসার জবাব আরও হিংসা নয়, বরং বিবেক আর মানবিকতার পথেই খোঁজা উচিত!
আরও পড়ুনঃ “পরিবারের দিকে কেউ চোখ তুললে খু’ন করতেও ভাবব না” — পর্দার নিশা নয়, বাস্তব জীবনে এমনই ভয়ংকর বার্তা দিলেন শ্রুতি দাস! জোয়ার ভাঁটা-র লড়াকু চরিত্রের আড়ালে বাস্তব জীবনে কেমন অভিনেত্রী? জানালেন নিজের মুখেই!
সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে কোয়েল মল্লিকের প্রতিক্রিয়া কোনও রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত বেদনা আর প্রত্যাশার প্রকাশ। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছিল, সেই আশার মাঝেই নতুন করে এই অস্থিরতা ধাক্কা দিল। তবু অভিনেত্রীর কণ্ঠে বারবার ফিরে আসছে একই প্রার্থনা, অস্থিরতা কেটে যাক আর শিল্প-সংস্কৃতি আবার মানুষের কাছে শান্তির ভাষা হয়ে উঠুক।
