জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“বাবা দেখতে ভালো ছিলেন, ছেলের চেহারা একদমই অভিনেতা সুলভ নয়!”— ছোট থেকেই চেহারা নিয়ে কটুক্তি সহ্য করতে হয়েছে! থিয়েটারে ঘর মোছা থেকে অভিনয়ের মঞ্চ দাপানো, করে দেখিয়েছেন শুভেন্দু পুত্র শাশ্বত!

বিনোদন জগতের দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই নিজের দাপুটে অভিনয়ের জোরে যিনি নিজের জায়গা করে নিয়েছেন শীর্ষে, তিনি হলেন ‘শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়’ (Saswata Chatterjee)। তবে আজ যাঁকে একডাকে গোটা ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে জনসাধারণ চেনে, সেই মানুষটার এই নামের পিছনে পথটা ছিল একদমই মসৃণ। অভিনয়ে তাঁর পারদর্শিতা নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি, তবে প্রথমদিকে বাংলার ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে কোনদিনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সেই হতাশা, অপমান আর কঠিন সময় থেকে বেরিয়ে আজকের শাশ্বত হয়ে ওঠা সহজ ছিলনা!

অভিনেতা এক সাক্ষাৎকারে সেই দিনগুলোর স্মৃতির পাতা খুলে বলেন, থিয়েটারে কাজ করার সময় তাঁকে নাকি মঞ্চ পরিষ্কার করার কাজ দেওয়া হয়েছিল। নিজের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে কোনওরকম অহংকার না করেই তিনি সেই কাজটিও মন দিয়ে করেছেন। শাশ্বত বরাবর বলেছেন যে তাঁর বাবা অভিনেতা হওয়া সত্বেও কোনোদিন ছেলেকে সান্তনা দেননি যে কাজে ঢুকিয়ে দেবেন, হিরো বানিয়ে দেবেন। বরং শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় সবসময় শাশ্বতকে বলতেন যদি ইন্ডাস্ট্রির একজন হতে হয়,

তবে সেটা নিজের দক্ষতায় এবং ক্ষমতার জোরে হতে হবে, বাবার নাম ভাঙিয়ে নয়! অভিনয় আসার পর প্রথমদিকে অনেকেই তাঁকে পাত্তা দিতেন না, এমনকী কেউ কেউ বলতেন—“বাবা এত সুদর্শন, কিন্তু ছেলে তো দেখতে একেবারেই খারাপ, আবার নায়ক হতে চায়।” এই ধরণের কড়া মন্তব্যও শাশ্বতকে দমাতে পারেনি কখনই। বরং এক ধরনের আগুন হয়ে জমে ছিল তাঁর ভিতরে, যা তাকে পরবর্তীতে উচ্চতর শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

বাংলা চলচ্চিত্রে সেভাবে যখন তাঁকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল না, তখনই হিন্দি সিনেমা থেকে আসা সুযোগগুলো যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে শাশ্বতর কাছে। প্রথম হিন্দি ছবি ‘কাহিনী’তে তাঁর অভিনয় নজর কাড়ে, এরপরই বদলে যেতে শুরু করে পরিস্থিতি। যেই ইন্ডাস্ট্রি একসময় তাঁকে কাজ দিতে চাইতেন না, তাঁর অভিনয় নিয়ে ভাবতেন না, তাঁরাই একের পর এক ছবির অফার নিয়ে আসতে থাকেন। শাশ্বত স্পষ্ট ভাষায় জানান, বাংলার পরিচালকরা তখনই তাঁকে কাজ দিলেন,

যখন অন্য জায়গায় কাজের সাফল্যে তিনি নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন। তবে অভিনেতা শুধুমাত্র নিজের সাফল্য নিয়েই যে কথা বললেন তা না, বরং তাঁর জীবনে যাদের সবচেয়ে বেশি অবদান, তাঁদের কৃতজ্ঞতাও জানালেন। অভিনেতা অঞ্জন দত্তের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সময়ে একমাত্র অঞ্জন বাবুই ছিলেন যিনি পরপর কাজ দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। একজন শিল্পীর জীবনে যখন কেউ ভরসা রাখেন, সেটা কতটা মূল্যবান হতে পারে অভিনেতার বক্তব্যে তা স্পষ্ট।

সব শেষে শাশ্বত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় বাস্তবতা! তাঁর মতে, “লুক” বা দেখতে কেমন—এটাই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় এই পেশায়। একজন অভিনেতা কেমন কথা বলেন, তা যতই ভালো হোক না কেন, ক্যামেরায় তাঁকে কেমন লাগে সেটাই ঠিক করে দেয় ভবিষ্যৎ। তিনি মনে করিয়ে দেন, বাস্তবে মানুষ কেমন, তার থেকেও বড় হয়ে দাঁড়ায় ক্যামেরার সামনে তাঁর উপস্থিতি।

Piya Chanda