সম্পর্ক মানেই শুধু সুখ আর ভালোবাসা নয়, মাঝে মাঝে তাতে ধাক্কাও আসে। কখনও বিশ্বাস ভেঙে যায়, কখনও তৈরি হয় মানসিক টানাপোড়েন। সমাজের প্রচলিত নিয়মে অনেক সময় নারীদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখা হয়। তারা নিজেদের কষ্ট চেপে রাখতে বাধ্য হন, কারণ অভিযোগ তুললেই শুরু হয় দোষারোপের পালা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন এক নারী অন্য নারীর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন। সম্প্রতি ইউটিউবার সায়ন্ত মোদক এবং কিরণ মজুমদারের সম্পর্কের ভাঙন ঘিরে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকলো নেটদুনিয়া। কিরণের ইউটিউব ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে চমকে দেওয়ার মতো মন্তব্য করেছেন সায়ন্তর প্রাক্তন প্রেমিকা দেবচন্দ্রিমা মজুমদার। তার কথায় উঠে এসেছে অতীতের কিছু ঘটনার ছায়া, যা আরও বড় ইঙ্গিত বহন করছে।
আজকের দিনে সম্পর্কের উত্থান-পতন আর ব্যক্তিগত বিষয় হয়ে থাকে না। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা জনসমক্ষে চলে আসে, বিশেষ করে যখন দুজন জনপ্রিয় ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন। কিরণ তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও আপলোড করেন, যেখানে তিনি তার এবং সায়ন্তের সম্পর্কের ভাঙন নিয়ে কথা বলেন। এই ভিডিওর পরপরই দেবচন্দ্রিমা সেখানে মন্তব্য করেন, যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। দেবচন্দ্রিমার এই মন্তব্য কেবল কিরণের প্রতি সহানুভূতি জানায়নি, বরং ইঙ্গিত দিয়েছে যে, কিরণের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছিল অতীতে। তার বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ যেন এক নতুন সত্য সামনে তুলে ধরছে।

দেবচন্দ্রিমা তার মন্তব্যে প্রথমেই কিরণকে প্রশ্ন করেন— “Kiran” নামের মানে কী বলতো? আমি তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা, তোমার পুরো ভিডিওটা দেখলাম আর আমি ‘Kiran Majumder’ কে দেখতে পেলাম না, ‘2021-এর দেবচন্দ্রিমা’ কে দেখতে পেলাম।” এই কথার মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেন যে, কিরণের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তার নিজের অতীতের আশ্চর্য মিল রয়েছে। তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, কিরণের সঙ্গে যা ঘটছে, সেটাই হয়তো তার ক্ষেত্রেও হয়েছিল। তার মানে, কিরণও হয়তো সেই একই প্রতারণার শিকার হয়েছেন, যা তিনি নিজে হয়েছিলেন ২০২১ সালে। এরপর তিনি লেখেন— “আমি দুঃখিত, তোমাকে এই ভিডিওটা ২০২১ সালেই বানানো উচিত ছিল। কোথায় বলে না, পাপ বাবা-মাকেও ছাড়ে না, তবে এখানে যেন বাবা-মা কেউ না ছাড়ে!” এই বাক্যটি আরও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। দেবচন্দ্রিমা কি এখানে সায়ন্তের অতীত কোনো ভুলের দিকে ইঙ্গিত করছেন? তিনি কি বোঝাতে চাইছেন যে, যা কিরণের সঙ্গে ঘটেছে, তা একেবারে নতুন কিছু নয়? এই লাইন থেকেই স্পষ্ট, তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন সায়ন্তের পুরনো অভ্যাসের দিকেই, যা হয়তো আগেও ঘটেছে এবং আবারও ঘটেছে।
দেবচন্দ্রিমার সবচেয়ে শক্তিশালী বক্তব্য ছিল—
“সে কি তোমার গায়েও হাত তুলেছে? আমাকে হ্যাঁ বলো না, এবার ওকে আমি শেষ করে দেব… তুমি শুধু যোগাযোগ করো। ভয় পেয়ো না, তোমার বড় দিদি এই মুহূর্তে কলকাতাতেই আছে।” এই কথাগুলো কেবল এক সাধারণ মন্তব্য নয়, এটি নারীদের পারস্পরিক শক্তির প্রতীক। এখানে দেবচন্দ্রিমা যেন কিরণকে আশ্বস্ত করছেন—তুমি একা নও, আমি তোমার পাশে আছি। একজন মেয়ে যখন আরেকজন মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ান, তখন অন্যায়কে আর লুকিয়ে রাখা যায় না। যদি সত্যিই কিরণ কোনো শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন, তবে দেবচন্দ্রিমা জানিয়ে দিয়েছেন, এবার তিনি নীরব থাকবেন না।
আরও পড়ুনঃ সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে শেষ হল পর্ণা-সৃজনের গল্প!হাসি-কান্নায় দত্ত বাড়িকে বিদায় জানালো ‘নিম ফুলের মধু’কে
দেবচন্দ্রিমার এই মন্তব্য শুধু কিরণকে মানসিক শক্তি দেয়নি, এটি সমাজের প্রতিও একটি স্পষ্ট বার্তা। নারীদের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে এখন নারীরাই রুখে দাঁড়াচ্ছেন। তারা একে অপরের পাশে থাকছেন, একে অপরকে রক্ষা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই দেবচন্দ্রিমার এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি নারী সংহতির এক দুর্দান্ত উদাহরণ। কেউ কেউ বলছেন, সমাজে যেখানে অনেক নারী নিজেদের অবস্থান বুঝে নিতে পারেন না, সেখানে দেবচন্দ্রিমার মতো সাহসী অবস্থান নেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়।
এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, নারীদের উচিত নিজেদের কণ্ঠস্বর শক্তিশালী করা। যখন একজন নারী অন্যায়ের শিকার হন, তখন তার পাশে দাঁড়ানো উচিত অন্য নারীদের। কারণ, একতা ছাড়া অন্যায়কে রোখা সম্ভব নয়। আজকের দিনে নারীরা একসঙ্গে থাকলে, তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করা অত সহজ হবে না। দেবচন্দ্রিমার মন্তব্য সেই বার্তাই দিয়ে গেল—নারী যখন একজোট হয়, তখন সত্যের মুখোশ খুলে যায়!