একটা চরিত্র বদলে দিতে পারে একজন অভিনেতার কেরিয়ার। জি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ (Chirodini Tumi Je Amar) ধারাবাহিকের ‘সন্তু’ চরিত্রটি তেমনই এক মোড় ঘোরানো অধ্যায় ‘তন্ময় মজুমদার’-এর (Tanmay Majumdar) জীবনে। এর আগে টুকটাক কাজ থাকলেও, সন্তুর মতো একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে সুযোগ পেয়ে যেন নিজের অভিনয় ক্ষমতাকে প্রমাণ করার জায়গা পেয়েছেন তিনি। অনেকেই জানেন না, এই চরিত্র পাওয়ার আগে প্রায় ৯ মাস কাজ ছিল না তাঁর হাতে। কিন্তু সেই বিরতি যেন তাঁকে তৈরি করেছে এই চরিত্রের জন্য।
তন্ময়ের অভিনয়ের যাত্রাটা কিন্তু খুব গ্ল্যামারাস ছিল না। প্রায় দুই যুগ আগে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে, বহরমপুর থেকে কলকাতায় আসেন তন্ময়। বহু অপমান, প্রত্যাখ্যান, এমনকি অভিনয়ের সুযোগের পরিবর্তে খাবার বানানোর কাজও করতে হয়েছে তাকে। একবার তো একটা ছবির শুটিং সেটে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন ভেঙে পড়লেও থেমে যাননি। তিনি জানতেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে গেলে শুধু প্রতিভা নয়, জেদ আর ধৈর্যও প্রয়োজন। তাই প্রত্যেকটা না-কে তিনি নিয়েছেন নতুন করে শুরু করার ইন্ধন হিসেবে।
অরিন্দম শীলের পরিচালনায় ‘ধনঞ্জয়’ আর হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘বাঘবন্দি খেলা’তে ২০১৮ সালে অভিনয় করেন তিনি। এরপর নায়ক হওয়ার সুযোগ আসে, তবে শর্ত একটাই যে গায়ের রঙ কালো করতে হবে। অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালবাসাটা এতটাই ছিল যে, প্রতিদিন নুন মিশিয়ে সর্ষের তেল মেখে ছাদে বসে থাকতেন, রোদে চামড়া পোড়াতে। সমাজ মাধ্যম থেকেও দূরে সরে গিয়ে সময় দিয়েছিলেন নিজেকে গড়ায়। কারণ তন্ময়ের কাছে ‘নায়ক’ মানে শুধু চেহারা নয়, চরিত্রের গভীরতা, ভাবনার বিস্তার আর মানুষের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলা।
তাঁর প্রথম বড় কাজ ‘বাকি ইতিহাস’ ছবিতে নায়ক হিসেবে সুযোগ পাওয়াটা ছিল একরকম স্বপ্নপূরণ। সেই ছবি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হলেও, বাংলায় তার মুক্তি পাওয়া যেন একটা যুদ্ধ ছিল। পরিচালক তুষার বল্লভের সঙ্গে একসাথে সেই সংগ্রামে ছিলেন তন্ময়ও। কাজের প্রতি ভালোবাসা আর দায়বদ্ধতা থাকলেই যে একজন শিল্পী নিজের অবস্থান গড়ে তুলতে পারে, তন্ময় যেন তারই উদাহরণ। প্রযোজক-পরিচালকদের কাছে কখনও হাত পতেননি কাজের জন্য, নিজের দক্ষতা দিয়েই প্রতিটা সুযোগ ছিনিয়ে নিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ধ্বংসস্তূপের তলায় মৃ’ত্যু নয়, আশ্চর্যভাবে জীবিত আর্য-অপর্ণা! কিঙ্করের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত, রাজলক্ষ্মীর প্রার্থনায় সাড়া ঈশ্বরের! নদীর পারে আর্য-অপর্ণাকে খুঁজে পেল গ্রামবাসীরা!
আজ যখন দর্শক ‘সন্তু’ চরিত্রে তাঁকে দেখে প্রশংসা করে, তখন হয়তো অনেকেই জানেন না, তিনি একসময় মাত্র ১০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তাও আবার ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকা চরিত্রে। অথচ সেই ছোট্ট বাসের দৃশ্যের পিছনের ছেলেটাই আজ বড় পর্দা থেকে ছোট পর্দা– দুটোতেই নিজের মতো করে জায়গা করে নিচ্ছেন। তন্ময় জানেন, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। তবে একটা কথা নিশ্চয় বলা যায়– এই জেদ, এই লড়াই, এই সংযমই তাঁকে আরও অনেক ‘সন্তু’ এনে দেবে ভবিষ্যতে।