টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের (Biplab Chatterjee) জীবনটা যতটা বিচিত্র, ততটাই অনিশ্চিত সময়ের ছোঁয়ায় বদলে গেছে। একসময় যাঁর কঠিন দৃষ্টি আর তীক্ষ্ণ সংলাপে দর্শক শিউরে উঠত, আজ তিনি অনেকটাই নিরিবিলি জীবনের পথে হাঁটছেন। বয়স তাঁর শরীরের ওপর দাগ ফেলেছে কিন্তু মনন বা শিল্পীর সততা কোথাও ম্লান হয়নি। খ্যাতি থেকে বিতর্ক আর প্রশংসা মিলিয়ে যে পথ তিনি পেরিয়েছেন, সেটার ভারই এখন তাঁর শান্ত এবং কিছুটা বিচ্ছিন্ন বর্তমানের সঙ্গী।
আশির দশক থেকে নব্বইয়ের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা তাঁকে মনে রাখে মূলত তাঁর ভয়ঙ্কর পর্দার উপস্থিতির জন্য। অথচ এই ভয়াল খলনায়কের আড়ালে ছিলেন তিনি একেবারেই মাটির মানুষ, এই কথাটা অনেকেই জানতেন না। থিয়েটার থেকে সিনেমা, আবার সেখান থেকে টেলিভিশন, প্রতিটি অবকাশেই তিনি নিজের মতো করে জায়গা করে নিয়েছেন। স্বাধীন ভারতবর্ষের ১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই জন্ম হয় অভিনেতার। ১৯৭০ সালে, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো ছবিতে প্রথম কাজ করেই তিনি নিজের জাত চেনান।
অভিনয়ের জগতে তিনি যে স্থায়ী হতে পারবেন, তা কেউই হয়তো তখন বুঝতে পারেনি। কিন্তু চরিত্রকে নিজের ভেতরে টেনে নেওয়ার ক্ষমতা আর শ্রম তাঁকে টালিগঞ্জে আলাদা পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু কেমন ছিল তাঁর শৈশব এবং অভিনয় আসার গল্পটা? সম্প্রতি এই নিয়ে অভিনেতা বলেন, “আমার জন্ম লেক মার্কেটের ওখানে, মামাবাড়িতে। তখন এতটা হাসপাতালে গিয়ে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার প্রচলন ছিল না। তখন বরং প্রথা ছিল বাড়িতেই বাচ্চার জন্ম দেওয়া, তাই আমিও আমার দিদার হাতে জন্মেছিলাম।
তারপর মা বাবার সঙ্গে শ্যামবাজারের পৈতৃক বাড়িতে চলে আসি। সাত বছর পর আমার একটা ছোট বোন জন্ম নেয়। আমি ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতে ভালোবাসি। পাড়ায় নাটক করতাম, থিয়েটারও করেছি। সেই থিয়েটারেই একবার, এখন যেটা রামমোহন মঞ্চ নামে বিখ্যাত– সেখানে ‘অভিমন্যু বধ’ বলে একটা নাটক করেছিলাম। বাবা-মা সেই প্রথম আমার নাটক দেখতে গিয়েছিলেন। বাবা দেখে বাড়ি ফিরে বলেছিলেন যে, ‘ও যা করেছে দেখলাম, এবার ওকে সিনেমায় নামিয়ে দেবো।’
এটাই বোধয় আমার কাল হয়েছিল। বাবা যে সিনেমায় নামবে, এই কথাটাতে আমার মাথাটাই ঘুরে গিয়েছিল। ভাবতাম যে, সিনেমার আর্টিস্ট হলে তো মারাত্মক ব্যাপার হবে! তখন আমি স্কুলে পড়ি, নাটক করছি বিভিন্ন রকম। তবে, রবীন্দ্রনাথ আমার বরাবর প্রিয়। ওই মানুষটার অনেক নাটক করেছি, ওই জন্যই বোধহয় বেঁচে আছি। তাঁকে ভোলা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।” উল্লেখ্য, রাজনীতিতেও তিনি ছিলেন সমান দৃঢ়, যা তাঁর অভিনয়জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ “বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক”— বহু ভাষায় সুপারহিট অন্বেষা দত্তগুপ্ত, তবু মাতৃভাষার সুরেই সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ! বাংলার প্রতি তার আবেগের গল্প জানলেন গায়িকা!
দলের হয়ে আন্দোলনে নামা, ভোটের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত তাঁকে কখনো সুবিধাজনক অবস্থানে রাখেনি। তবুও তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি, অন্যায়ের সামনে মাথা নত করতে শেখেননি। হয়তো সেই কারণেই পরবর্তী সময়ে কাজের সুযোগ কমে আসে, পর্দায় উপস্থিতিও বিরল হয়ে যায়। তবু তাঁর অবদান নিয়ে কোনও সংশয় নেই, টলিউডের এক সাহসী অভিনেতার যাত্রাপথ আজও অনেকের স্মৃতিতেই অটুট।
