টলিউডের প্রতিভাবান শিল্পীদের মধ্যে এক অন্যতম মুখ ‘ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়’ (Bhaswar Chatterjee)। আজ তিনি সফল হলেও একটা সময়ে কিন্তু এই জায়গায় পৌঁছতে তাঁকে কম ল’ড়াই করতে হয়নি। চার দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয়ের সাথে যুক্ত থাকলেও শুরুটা ছিল অন্যরকম। স্টুডিওর বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন। এক ডিরেক্টরের কাছে একাধিকবার গিয়ে অপমান আর উপেক্ষাই মিলত কেবল, সুযোগ আর মিলত না। কিন্তু কখনও নিজেকে হারাতে দেননি তিনি। বরং সব প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে নিজেকে তৈরি করেছেন অভিনেতা হিসেবে।
অভিনেতার পরিবারের কেউই কোনদিনও অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সেই জন্যেই যখন প্রথম তিনি অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা জানান, তখন পরিবারের লোকেরা মজা ভেবে খুব একটা উৎসাহ দেখাননি। এরপর নিজেই নিজের ভাগ্য লিখতে উদ্ধত হন ভাস্বর। নিজের ছবি হাতে নিয়ে স্টুডিওর ঘরে ঘরে ঘুরেছেন, কাজের খোঁজে ছুটেছেন এক পরিচালকের কাছ থেকে আরেক পরিচালকের কাছে। অনেক সময় এমনও শুনতে হয়েছে—“তুমি আবার এসেছো? আগের দিনই তো এসেছিলে।”
এই কথাগুলো বেদনাদায়ক হলেও, বরং তাঁকে আরও শক্ত হতে শিখিয়েছে। অভিনয় জীবনের শুরুতেই তাঁকে করতে হয়েছে ছোট ছোট চরিত্র, সেই সময়টাতেই চরম অবহেলার শিকার হন ভাস্বর। সহ-অভিনেতা বা কলাকুশলীদের থেকে মেলেনি সম্মান, এমনকি নিজের উপস্থিতিকেও অনেকে গুরুত্ব দেননি। একবার একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাঁর নামে প্রথম সারিতে একটি চেয়ার বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সেই আসন থেকে এক নামী তারকা তাঁকে উঠে যেতে বলেন, শুধুমাত্র নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে।
সেই ব্যাক্তি ভাস্বরকে বলেন, “সর এখান থেকে, পেছনে গিয়ে বস। এখন আমি বসবো!” সেই অপমান সেদিন ভাস্বর চুপচাপ সহ্য করলেও ভিতরে ভিতরে জেদটা আরও দৃঢ় হয়েছিল। ভাস্বর জানতেন, নিজেকে প্রমাণ করতে গেলে তাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে, তাই প্রতিটি চরিত্রকে নিজের সেরা দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। ছবি হোক বা ধারাবাহিক, প্রত্যেকটি মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন বারবার।
আরও পড়ুনঃ শুটিং সেটেই মনের মানুষ! তুমি যে আমার হিরোর সেটে প্রেমে পড়লেন অভিনেতা সায়ক চক্রবর্তী? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের ইজহার!
বর্তমানে স্টার জলসার ‘গীতা এলএলবি’র মতো ধারাবাহিকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন। বছরের পর বছর ধরে আত্মসম্মান, প্রতিভা ও অধ্যবসায়ের জোরেই তিনি এই জায়গায়। ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের গল্প একাধারে যেমন বেদনাদায়ক তেমনি অনুপ্রেরণাদায়ক ও, অভিনেতার এই জীবনী থেকে বোঝা যায় কোন কিছুর প্রতি দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে সেটা একদিন পূরণ হতেই হয়।