ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতেন এই অভিনেত্রী। গোসাবা, সুন্দরবনের মেয়ে “বড় হয়ে কি হতে চাও?” এ প্রশ্নের উত্তরে বলতেন অভিনেত্রী। কিন্তু বাড়িতে সবার প্রবল আপত্তি। মা-বাবা দুজনেই ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী। ফলে ইন্ডাস্ট্রিতে আসার ব্যাপারে তাঁরা রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত পালিয়ে চলে এসেছিলেন কলকাতায়।
যে অভিনেত্রীকে নিয়ে বললাম তিনি হলেন কখনও ‘কৃষ্ণকলি’র পার্বতী, কখনও ‘অপরাজিতা অপু’র দিৎসা, আবার বাড়িতে সকলের আদরের ‘টুবলু’। এই চরিত্রগুলিতে অভিনয় করা বাড়ির আদরের টুবলু হলেন সুস্মিতা রায় চক্রবর্তী।
এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন তার গডফাদার বলে কেউ নেই। প্রত্যেকদিন একটু খাবার, মাথার উপরের ছাদের জন্যও লড়াই করতে হয়েছে। শিয়ালদহের ফুটপাতে ত্রিপলের নীচে ১৫ দিন কাটিয়েছেন। ওঁরা যে চাল-সব্জি-ডাল-নুন-মশলা-হলুদে ফোটানো খাবার খায় সেগুলি ছিল তার জন্যও বরাদ্দ। সোনারপুর থেকে সল্টলেক হেঁটে অডিশন দিয়েছেন টাকার অভাবে। বাড়ির লোক জানতে পেরে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। তবে আজ সেই বাবা-মাই মেয়েকে নিয়ে প্রচণ্ড গর্ববোধ করে। আজ সুস্মিতা নিজের পরিচয় নিজের বাড়ি গাড়ি কিনেছেন।
তবে এই অভিনেত্রী একান্ত ব্যক্তিগত এক কষ্টের কাহিনী রয়েছে যেটা অনেকেই জানে না। তিনি যখন সন্তান সম্ভবা হন সেটা ছিল কৃষ্ণকলি ধারাবাহিকের সেটে। পার্বতীর চরিত্র করার সময় ধারাবাহিককেও দেখানো হয় তিনি অন্তঃসত্ত্বা। ডেলিভারির ১ সপ্তাহ আগে পর্যন্ত শুটিং করে গেছেন কোন সমস্যা ছাড়া।
আসল সমস্যাটা হল ডেলিভারির সময়ে। চিকিৎসকের একটা ‘ছোট্ট’ ভুলে তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন। যখন ডেলিভারির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেই সময়েও ডাক্তাররা বলাবলি করছিলেন যে বাচ্চার হৃদস্পন্দন শোনা যাচ্ছে না। মায়ের শরীরের সমস্ত কষ্ট সহ্য করেও, তার কোল ছিল শূন্য। টানা ২ মাস শুয়ে থাকতে হয়েছে। তবে হাসপাতালের অব্যবস্থা এবং ডাক্তারের গাফিলতির দিকে অভিযোগ করেছেন। অজ্ঞান করার পর সম্পূর্ণ অপারেশন হয় এবং তারপর যখন জ্ঞান ফেরে সুস্মিতার তিনি জানতে পারেন মেয়ে হয়েছিল। এমনকি সন্তান মারা যাবার পর যে রুমে রাখা হয়েছিল অভিনেত্রীকে সেখানে অন্যান্য মায়ের পাশে তার সন্তানরা কাঁদছে কিন্তু তার পাশের বেড ফাঁকা।