বলাই বাহুল্য বাংলা সিনেমা (Bengali Cinema) দুনিয়ায় পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর (Anjan Choudhury ) অবদানকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারোর নেই। তিনি বাংলা সিনেমাকে একার হাতে ঘুরে দাঁড় করাতে সাহায্য করেছেন। তার অবদান ছাড়া বাংলা সিনেমার সেই জৌলুস ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না। অঞ্জন চৌধুরীর সিনেমা মানেই বাস্তবতার কাছাকাছি পারিবারিক গল্প। আর সেই সমস্ত সিনেমায় বুঁদ ছিল বাঙালি দর্শক।
অঞ্জন চৌধুরীর ‘হীরক জয়ন্তী’, ‘মেজবউ,’ ‘গীত সংগীত,’ ‘লোফার’-এর মতো একাধিক সিনেমা এখনও বাঙালির মনে আছে। আজকালকার মতো নিখুঁত সিনেমাটোগ্রাফি, বিষয়বস্তু বা গল্প, বা প্রযুক্তি কোনটাই হয়ত ছিল না অঞ্জন চৌধুরীর গল্পে। তবে শুধুমাত্র ছিল নিখাদ পারিবারিক গল্প। আর যা বিনোদন দিত বাঙালিকে।
অঞ্জন চৌধুরীর সিনেমা মানেই বাঁধা ধরা ছিলেন দুইজন অভিনেত্রী। অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী ও রিনা চৌধুরী। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় এই দুই অভিনেত্রী পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর দুই সুকন্যা। একটা সময় টলিউড দাপিয়েছেন এই দুজন। টলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে তারা পড়তেন। বেশিরভাগ সিনেমাতেই দুই বোনকে এক সঙ্গে দেখা মিলত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নায়িকা চুমকি এবং খলনায়িকা রিনা।
তবে বহু বছর পর একটা দুটো বাংলা সিরিয়ালে চুমকি চৌধুরীর দেখা মিলেছে। দেখা একেবারেই মেলেনি রিনা চৌধুরীর। এত বিশাল স্টারডম সত্ত্বেও কেন হারিয়ে গেলেন এই দুই বোন? দিদি নাম্বার ওয়ান এর মঞ্চে এসে চুমকি চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তিনি অভিনয় করতে চাননি। আসতে চাননি এই পেশায়। ইচ্ছে ছিল শিক্ষিকা হওয়ার। একমাত্র বাবার জোরাজুরিতেই অভিনয়ে আসেন।
অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, ঘরের কাজ, রান্নাবান্না, সেলাই, ঘর সাজানোতেই আলাদা আনন্দ উপভোগ করতেন তিনি। কিন্তু বাবা দুই মেয়েকেই অভিনয়ে এনেছিলেন। একইসঙ্গে অকপটে অভিনেত্রী বলেছিলেন, তারা শুধুমাত্র পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর মেয়ে বলেই একের পর এক ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। একটা সময়ের টলিউডের এই সুপারস্টার নায়িকার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি যেহেতু তার নামের পিছনে অঞ্জন চৌধুরীর নাম রয়েছে তাই টলিউডে টিকে গিয়েছিলেন তারা। নাহলে বেরিয়ে যেতে হতো।
বাবাই ছিলেন চুমকি চৌধুরীর জীবনের সব। একাধারে তিনিই পিতা আবার তিনিই শিক্ষক। আর তাই বাবাকে হারানোর পর ধীরে ধীরে অভিনয়ের থেকে দূরত্ব বেড়ে যায় চুমকি চৌধুরীর। অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন বাবাকে হারানোর পর আর শুটিং সেটে এসে মন দিতে পারতেন না কাজে। আর এরপর তিনি আর অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নেন।
অভিনেত্রীর কথায়, কোনওদিনই প্রতিযোগিতায় নামতে চাননি তিনি। বরং অনেক বেশি করে শান্তি চেয়েছেন। সাফল্যের ম্যারাথন দৌড়ে না নেমে জীবনটাকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে চেয়েছেন। অন্য পরিচালকদের সঙ্গে কাজ না করা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী আরও জানিয়ে ছিলেন, পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পছন্দ করতেন না তার দুই কন্যা অন্য কোনও পরিচালকের সিনেমায় কাজ করুক। নিজের দুই মেয়েকে একমাত্র নিজের সিনেমায় কাজ করার অনুমতি দিয়েছিলেন অঞ্জন চৌধুরী। অন্য কোনও প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে চুমকি-রিনার কাছে কাজের অফার এলে না করে দিতেন অঞ্জন চৌধুরী।