মহানায়ক উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকা চরিত্রে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। যাঁকে বলে বিগ ব্রেক। তবে অভিনয় নয়, তিনি প্রথম জীবনে অসামান্য গায়িকা ছিলেন। দারুণ ছিল তাঁর গানের গলা। বিয়ের আগে রেডিওতেও গান গেয়েছিল অভিনেত্রী শকুন্তলা বড়ুয়া। যদিও পরবর্তীতে তাঁকে এক সুদক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে পায় বাংলা ইন্ডাস্ট্রি।
কপালে বড় টিপ, চোখে কাজল আর ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক এটাই ছিল শকুন্তলা বড়ুয়ার ট্রেডমার্ক সাজ। দেবের ‘টনিক’ সিনেমায় শেষ বারের মতো দেখা গেছে শকুন্তলা বড়ুয়া। সেই অর্থে টেলিভিশনেও তাঁকে আর দেখা যায়না। তাঁর শেষ ধারাবাহিক ক্ষীরের পুতুল।
অত্যন্ত অল্প বয়সে কলকাতার এক রক্ষণশীল পরিবারে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল শকুন্তলা ভট্টাচার্যের। বিয়ের পর তিনি পরিচিতি পান শকুন্তলা বড়ুয়া নামে। না, তাঁর শ্বশুরবাড়ি অভিনয়, গান এই সবের থেকে শতহস্ত দূরে ছিল। অভিনেত্রীর স্বামী ছিলেন কোল ইন্ডিয়ার জেনারেল ম্যানেজার। বাড়িতে আমলাদের আনাগোনা ছিল। পরিবারের বেশিরভাগই আইএস, আইপিএস।
যদিও অভিনেত্রীর গানের চর্চায় কোনদিনই বাধা দেয়নি তাঁর শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু শকুন্তলা যে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আর তখনকার দিনের সমাজে অভিনয় পেশা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের একটি কাজ। উচ্চবিত্ত পরিবারের পুত্রবধূ কিনা অভিনয় করবে! এমনটা ভাবাও বোধহয় পাপ ছিল তখনকার দিনে। কিন্তু পরিবারের সেই ভাবনা-চিন্তা সংস্কারকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন শকুন্তলা বড়ুয়া।
ভূপেন হাজারিকার সঙ্গেও গান গেয়েছিলেন শকুন্তলা বড়ুয়া। উল্লেখ্য, আর তাঁর সঙ্গেই প্রথম বার ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন তিনি। তাঁর চোখ দুটি দেখে ভালো লেগেছিল এক পরিচালকের। তিনি কাজের অফার দিলেও করেননি শকুন্তলা। এরপরেও এসেছে বহু অফার কিন্তু কখনই সম্মতি জানাতে পারেননি দুই সন্তানের মা শকুন্তলা।
জানা যায় পরে শচীন অধিকারী তাঁর ছবি ‘গান্ধারী’তে মূল নায়িকার চরিত্রে অফার দেন শকুন্তলাকে। এইবার আর ফেরাতে পারেননি। যদিও তাঁর স্বামী কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। পরে অনেক অনুনয় বিনয়ের পর একটিমাত্র সিনেমাতেই অভিনয় করবেন এই শর্তে অনুমতি আদায় করেন।
উল্লেখ্য, পরে এই ‘গান্ধারী’ সিনেমার নাম বদলে হয়ে যায় ‘সুনয়নী’ এবং পরিচালক শচীন অধিকারী বদলে হয়ে যান সুখেন দাস। নায়কের চরিত্রে আসেন মহানায়ক উত্তম কুমার। আর ব্যাস তা জানতে পেরেই বেঁকে বসেন শকুন্তলা বড়ুয়ার স্বামী। আসলে তখন প্রায় সব নায়িকার সঙ্গেই সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যেত মহানায়ক উত্তম কুমারের। যাঁরা উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করছেন তাঁরা আর কেউ ঘরে ফিরে সংসার করবেন না এমনটাই মনে করা হতো সেই সময়। আর তাই এরপর পরিচালক এবং প্রযোজকের অনুরোধের পর রাজি হন শকুন্তলা বড়ুয়ার স্বামী। প্রথম সিনেমাই দারুণ হিট। শেষ দিন পর্যন্ত উত্তম কুমার এবং শকুন্তলা বড়ুয়ার মধ্যে ভাই বোনের সম্পর্ক রয়ে গিয়েছিল।
তবে একটি সিনেমা নয় এরপরে বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন শকুন্তলা বড়ুয়া। তবে সন্তানদের মানুষ করার জন্য একটা দীর্ঘ সময় তিনি বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। তারপর যখন ফিরে আসেন তখন আর নায়িকা নয় পেয়েছিলেন পার্শ্ব চরিত্র। বিশেষ করে মায়ের চরিত্র। আর সেইসব চরিত্রেও সমান সাবলীল ছিলেন তিনি। অভিনয়ের খিদে আজও তাঁর মধ্যে রয়ে গেছে। আর তাই অপেক্ষা করেন ভালো কাজের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শকুন্তলা দেবীর মেয়ে রাজসী বিদ্যার্থীও কিন্তু একজন সুঅভিনেত্রী ও সুগায়িকা। বলিউডের পরিচিত মুখ তিনি। আর শকুন্তলা বড়ুয়ার জামাই হলেন বলিউড অভিনেতা আশিস বিদ্যার্থী। তিনিও বলিউডের নামকরা দাপুটে অভিনেতা।