টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পালের (Tapas Paul) চলে যাওয়ার পর স্ত্রী নন্দিনী পাল (Nandini Paul) আর মেয়ে সোহিনীর জীবনটা অনেকটাই বদলে যায়। হঠাৎ করেই সংসারের কেন্দ্রটা ফাঁকা হয়ে পড়েছে আর সেই শূন্যতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। মুম্বইয়ের স্থায়ী জীবন ছেড়ে সোহিনী কলকাতায় ফিরে এসেছেন, কারণ মাকে একা রেখে দূরে থাকা সম্ভব ছিল না। ধীরে ধীরে মা-মেয়ে একে অপরের অভ্যাস, প্রয়োজন আর নীরবতার সঙ্গী হয়ে উঠেছেন।
প্রায় ছয়টা বছর মাথার উপর দিয়ে ছাতাটা সরে গিয়েছে নন্দিনী এবং সোহিনীর। ওই বিশেষ মানুষটাকে হারানোর পর, এখন কেমন দিন কাটছে তাদের? ইন্ডাস্ট্রি কি এগিয়ে আসছে বা আসে বিপদে আপদে? এদিন নন্দিনী বললেন, “অবশ্যই একটা শুন্যতা তো থাকবেই মানুষটা যেভাবে চলে গেল। কিন্তু আমি এবং আমার মেয়ে ওনার শেখানো মূল্যবোধ আর রাস্তায় হাঁটছি আর এতেই আমরা সুখী আছি অনেকটা। মানুষটা হয়তো নেই, কিন্তু ওনার স্পর্শ বা ওনার সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোর স্মৃতি আজীবন আমার সঙ্গেই থাকবে।
আমি বিয়ে করে আসার পর থেকেই দেখেছো বুম্বার (প্রসেনজিৎ) সঙ্গে তাপস বাবুর কি ভালো সম্পর্ক ছিল। ওনার সমসাময়িক প্রায় সকল পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক ছিল ওনার সূত্রেই। নিজেদের একটা পরিবার মনে হতো।” প্রশ্ন করা হয়, তাপস পালের যে এত সুন্দরী নায়িকা ছিলেন, কখনওই স্ত্রী হিসেবে মনে হয়নি যে স্বামী বেপথে চলে যেতে পারে? অথবা একসঙ্গে পর্দায় রসায়ন দেখে বাস্তবের চিন্তা হয়নি? নন্দিনীর এবারের উত্তর ছিল যথেষ্ট সংযত এবং পরিণত।
তিনি বলেন, “আমার শশুর একজন চিকিৎসক ছিলেন। আমি ওনাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, তবে প্রত্যেকটা পেশাতেই এটা আছে। মানে, একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাপসের বাবাকে অনেক নারীদের সঙ্গেই কাজ করতে হতো। সেখানে অসংখ্য মহিলাদের প্রসব করতে হতো, তাই বলে তার শরীর দেখেই প্রেমে পড়ে যাবেন এটা তো হয় না। তবে, সবার ঊর্ধ্বে একজন মানুষ তো আর জীবনে অনেক কিছুই হতে পারে, তার জন্য নির্দিষ্ট পেশা লাগে না। আমার ক্ষেত্রে বলবো যে একজন অভিনেতার স্ত্রী হয়ে গেলে কানে কম শুনতে হয়, চোখেও একটু কম দেখতে হয়।
আর ভুলে যাওয়া রোগ থাকতে হয় এবং মনে কিছু ধরতে নেই। এছাড়াও অনেক কিছু দেখেও না দেখতে হয় আর এগুলো করতে পারলেই তুমি সুখে শান্তিতে থাকবে। আমি বলছি না আমার ক্ষেত্রে এটা হয়েছে, তবে আমি আস্তে আস্তে এটা বুঝতে পেরেছি। আমি জানি আজ যদি কোনও সমস্যায় পড়ি, তাহলে সেটা ঋতুপর্ণা হোক বা শতাব্দী কিংবা দেবশ্রী, কেউ না কেউ ঠিক এগিয়ে আসবে।” এদিকে অভিনয়ের জগৎ থেকে সোহিনীর দূরে থাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও, বাস্তবটা অনেক বেশি সাধারণ।
আরও পড়ুনঃ “ধিরিঙ্গি নাচ নাচে, হঠাৎ করে কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো?” “ঠিক আছে, কিন্তু দ্বিতীয়বার আর চেষ্টা করবেন না!” চেনা সংসারী ইমেজ ভেঙে হিন্দি গানে রিল বানাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কটা’ক্ষের মুখে অভিনেত্রী ময়না বন্দ্যোপাধ্যায়!
যে জিনিস করতে গিয়ে নিজের সম্পূর্ণটা দিতে পারেন না, সেটা থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করেন সোহিনী। বাবার ইচ্ছেতে একটি ছবিতে কাজ করলেও, পরবর্তীতে আর অভিনয়ের প্রতি সেই টানটা তিনি অনুভব করেননি। কাজের খোঁজে প্রতিদিন ফোন করা বা তাড়াহুড়ো করে নিজেকে সামনে আনার প্রবণতা তাঁর নেই। বরং সময়টা তিনি কাটাচ্ছেন মায়ের সঙ্গে, সংসার আর নিজের লেখালিখির মধ্যেই। ভবিষ্যৎ কী হবে, এসব নিয়ে আপাতত তাঁর চিন্তা নেই। তিনি বলেন, সুযোগ এলে দেখা যাবে আর না এলে এই শান্ত সময়টাই তাঁদের দুজনের শক্তি হয়ে থাকবে।
