বর্তমান সময়েও দাঁড়িয়েও বাংলা টেলিভিশনের পর্দায় নতুন প্রজন্মের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিনয় করে, এখনও নিজের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন প্রবীণ অভিনেত্রী (Veteran Actress) ‘কল্যাণী মণ্ডল’ (Kalyani Mandal)। যদিও আজ তিনি পরিচিত একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে, তবে তাঁর শুরুর পছন্দের জায়গা ছিল নাচ। এক সময়ে দক্ষ ক্লাসিক্যাল ডান্সার (Classical Dancer) ছিলেন তিনি। তবে অভিনয়ের চাপে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই নৃত্যের ছন্দ।
স্বয়ং কল্যাণী মণ্ডলই বলেছেন, “অভিনয় করতে করতে একসময় বুঝলাম নাচটাই আর করা হলো না।” কিন্তু এই অভিনয় জগতের পথচলাও যে রূপকথার চেয়ে কম নয়, তাঁর তরুণ বয়সের অভিজ্ঞতাই প্রমাণ করে। একেবারে কেরিয়ারের শুরুতেই সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি— মহানায়ক উত্তম কুমার ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের সঙ্গে কাজ করার। মহানায়কের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন কল্যাণী মণ্ডল। ইন্ডাস্ট্রিতে ‘জ্যেঠা’ বলে ডাকার অধিকার পেয়েছিলেন একমাত্র কল্যাণীই।
উত্তম কুমারও স্নেহ করে তাঁকে ডাকতেন ‘বাবা’ বলে। ‘সন্ন্যাসী রাজা’ ছবিতে রতন চরিত্রে তাঁর অভিনয় আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। সম্প্রতি অতীতের সেই মূল্যবান মুহূর্তগুলি স্মৃতিচারণ করেন অভিনেত্রী। ১৪ বয়সী কল্যাণী ‘আলো আমার আলো’ ছবিতে সুচিত্রা সেনের বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। পরিচালনা করছিলেন পানুদা অর্থাৎ পিনাকি ভূষণ মুখোপাধ্যায়। প্রথম শ্যুটিংয়ের দিনেই সুচিত্রা সেনের সঙ্গে দৃশ্যর জন্য উৎসাহ যেমন ছিল, তেমনি ছিল ভয়।
প্রথম দৃশ্য ছিল উত্তম কুমার গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন আর সুচিত্রা সেন গাড়ির পেছনে ছুটে গিয়ে দাঁড়াবেন, কল্যাণী গিয়ে দিদির কাঁধে হাত রেখে গাড়ির দিকে তাকাবেন। শটে ছুটে গিয়ে কল্যাণী দিদির কাঁধে হাত রাখতেই সুচিত্রা দেবী বললেন, “কাট! ডোন্ট টাচ!” পরক্ষণেই পানুদা পাল্টি খেয়ে বললেন, “ধরবি না! ধরবি না!” এমন আচরণে বেশ চমকে গিয়েছিলেন কিশোরী কল্যাণী। মনস্থির করলেন আর দিদিকে আর ছোঁবেন না।
কিন্তু চমকের শেষ এখানেই নয়। গোটা এক মাসের মতন শুটিং চলেছিল, টেকনিশিয়ান স্টুডিও জুড়ে বানানো হয়েছিল বস্তির সেট। আট দিনের মাথায় পরবর্তী দৃশ্যে, যখন দাদার চাকরি পেয়ে বোনদের কি লাগবে জিজ্ঞেস করে, কল্যাণীর বলার কথা ছিল বেনারসি। দিদির থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই শটটা দিলেন, তখনও কাট বললেন সুচিত্রা। কিন্তু এবার সুচিত্রার বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বললেন, “আমার গলাটা জড়িয়ে ধরো।”
আরও পড়ুনঃ মেক্সিকোর এই সুন্দরীর বোল্ড ছবিতে বুঁদ সবাই! লাস্যময়ী অবতারে আজও উষ্ণতা ছড়ান বাংলার ‘নোরা ফতেহি’ ওরফে সৃজলা গুহ! সৃজলাকে নতুন চরিত্রে ফের ছোটপর্দায় দেখতে চান আপনারা?
সেই কথাতেই রীতিমতো হকচকিয়ে গেলেও, এক ঝটকায় কল্যাণী বুঝে গেলেন—মহানায়িকার আসলে অভিনয়ের গভীরতাই বজায় রাখতেই এই আদেশ। সেই মতন শট দিলেন। এরপরে আর ছবি করেননি একসাথে তবে সুসম্পর্ক ছিল সবসময়ই। ইন্ডাস্ট্রিতে যদিও মহানায়িকার এই বদমেজাজি আর অহংকারী তকমা ছিল চিরকাল। এখনও অনেকে মনে করেন ওনার মতন একজন দাম্ভিক মহিলা উত্তম কুমারকে পেয়েছিলেন বলেই মহানায়িকা হতে পেরেছেন।