আজকের দ্রুতগতির জীবনে সম্পর্কের সংজ্ঞা বদলাচ্ছে ঠিকই, তবে সেই ভিড়ের মধ্যেও কিছু মানুষ আছেন যাঁদের জীবনদর্শন আলাদা করে নজর কাড়ে। ‘টলি কুইন’ কোয়েল মল্লিকের (Koel Mullick) ক্ষেত্রেও তেমনটাই দেখা যায়। ছোট পরিবার, আলাদা থাকা এবং নিজের মতো করে বাঁচার প্রবণতার মধ্যেও তিনি যে মূল্যবোধটা আঁকড়ে ধরেছেন, তার শিকড় গিয়ে ঠেকেছে তাঁর বাবার শেখানো শিক্ষায়। সম্পর্কের হিসাব কষে নয় বরং দায়িত্ব আর সংযমের মধ্য দিয়েই যে জীবনের ভারসাম্য আসে, সেটাই তাঁর জীবনের বড় প্রাপ্তি।
কোয়েলের বেড়ে ওঠা যৌথ পরিবারে হলেও, তিনি কখনও সেটাকে নস্টালজিয়ার মোড়কে বেঁধে দেখান না। বরং সেই পরিবেশ থেকেই তিনি শিখেছেন মানুষকে বোঝার ভাষা। সব সম্পর্কেই যে সমান প্রাপ্তি থাকবে, এমন নয় এর এই বাস্তববোধ তাঁর চিন্তায় স্পষ্ট। তাই নিজের কষ্ট বা অভিমান নিয়ে উচ্চস্বরে অভিযোগ না করে, পরিস্থিতি সামলানোর দিকেই তাঁর ঝোঁক বেশি। এই মানসিকতা তাঁকে শুধু ব্যক্তি হিসেবে নয়, পেশাগত জীবনেও স্থির থাকতে সাহায্য করেছে।
এই স্থিরতার মূল উৎস অবশ্যই রঞ্জিত মল্লিক (Ranjit Mullick)। পর্দার বাইরেও যিনি বরাবর পরিবারকে জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছেন। বাবাকে কাছ থেকে দেখেই কোয়েল বুঝেছেন, কাজ আর সংসারকে আলাদা আলাদা পাল্লায় না রেখে একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আসল দক্ষতা। অভিনয়ের ক্ষেত্রে যেমন নিজের সেরাটা দেওয়া জরুরি, তেমনই পরিবারের প্রতি দায়িত্বও ফাঁকি দেওয়া যায় না। আর এই সমন্বয়টাই তাঁর জীবনের চলার পথ ঠিক করে দিয়েছে।
সম্প্রতি বড়দিনের আবহে বাবার কথা বলতে গিয়ে কোয়েলের অনুভূতিতে সেই শিক্ষার ছাপ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন, “বাবা হচ্ছেন আমার কাছে আসল সান্তাক্লজ। শুধু ক্রিসমাস বলে নয়, ছোটবেলা থেকে যত স্বপ্ন এবং আশা, সবটাই আমার বাবা পূরণ করেছেন। বাবার কাছ থেকে আমি কোনদিনও বকা খাইনি, কিন্তু অবশ্যই শৃঙ্খলা আর সংযমটা শিখেছি। আজ জীবনে যতটা বা যা কিছু করতে পেরেছি, সেটা হয়তো বাবার শেখানো সংযমের ফল।
আরও পড়ুনঃ “দিতিপ্রিয়া ছিল বলেই টিআরপি ছিল, এখন বুঝছি ও কী ম্যাজিক দেখাত”—তাহলে কি শিরিনের উপস্থিতিতেও ‘অপর্ণা’ হিসেবে কাটছে না দিতিপ্রিয়ার অভাব? একের পর এক বিয়ের জাঁকজমক সত্ত্বেও ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এ কেন নামছে টিআরপি গ্রাফ, কোথায় আটকে যাচ্ছে দর্শকের টান?
বাবা সব সময় বলেন, যে কোনও পেশায় অধ্যাবসায় আর নিয়মানুবর্তিতা না থাকলে উন্নতি করা হয় না। সব সময় বিনয়ী থাকতে শিখিয়েছেন উনি আর সেটাই হয়তো আজকের আমি হতে অনেকটা সাহায্য করেছে।” এই কথাগুলোর মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে তাঁর জীবনে বাবার প্রভাব। এই শিক্ষা কোনও ভারী তত্ত্ব নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগযোগ্য কিছু নিয়ম। প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক, মূল্যবোধগুলোই তাঁকে মাটিতে পা রেখে চলতে সাহায্য করে। বাবার কাছ থেকে পাওয়া দৃষ্টিভঙ্গিই আজ কোয়েলকে শুধু একজন সফল অভিনেত্রী নয়, একজন ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ হিসেবেও গড়ে তুলেছে।
