রিল বানানো যেন আজকের প্রজন্মের নেশা। যত বেশি রিল তত ভিউ আর সেই ভিউয়ের পেছনে অন্ধ দৌড়ে কত জীবন যে বিপন্ন হচ্ছে তার জ্বলন্ত উদাহরণ সুরাতের এই মর্মান্তিক ঘটনা। জনপ্রিয় ইউটিউবার প্রিন্স প্যাটেল স্টান্ট শ্যুট করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন। মাত্র আঠারো বছর বয়সী এই তরুণ নিজের প্রতিটি ভিডিওতে দুঃসাহসিক রাইডিং দেখাতে ভালোবাসতেন। সেই নেশাই শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেল তাকে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার দিকে যা মুহূর্তে থামিয়ে দিল তার জীবনযাত্রা।
ঘটনাটি ঘটে সুরাতের গ্রেটার লিনিয়ার ব্রিজের কাছে মাল্টি ফ্লাইওভার এলাকায়। প্রিন্স তখন তার কেটিএম ডিউক বাইক প্রবল গতিতে চালাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে তিনি ঘণ্টায় প্রায় একশো চল্লিশ কিলোমিটার গতিতে ছুটছিলেন। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক ডিভাইডারে ধাক্কা মারে এবং তিনি ছিটকে পড়ে রাস্তায় লুটিয়ে যান। আঘাত এতটাই প্রবল ছিল যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। সেই সময় তিনি মাথায় হেলমেটও পরেননি যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিন্সের পরিচিতি ছিল পিকেআর ভ্লগার নামে। বাইক স্টান্ট এবং রাইডিং ভিডিওতেই তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। নানা ভিডিওতে তাকে দেখা গেছে দ্রুত গতিতে স্টান্ট করতে এবং প্রায় সবক্ষেত্রেই তিনি কোনও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করতেন না। পুলিশ জানিয়েছে তিনি সুরাতের তরুণদের মধ্যে এক জনপ্রিয় মুখ এবং অনেকেই তার ভিডিও দেখে উৎসাহ পেতেন এমনকি তাকে অনুকরণও করতেন।
এই মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে প্রিন্সের পরিবার। তিনি ছিলেন তার মায়ের একমাত্র ছেলে। ছোট থেকেই বাইকের প্রতি তার প্রবল টান ছিল এবং নিজের প্রিয় কেটিএম বাইকের নামও রেখেছিলেন লাইলা। সেই প্রিয় বাইকই শেষ পর্যন্ত তার জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াল। আত্মীয়স্বজন সকলেই বলছেন স্টান্ট করার নেশা তাকে ধীরে ধীরে বিপজ্জনক অভ্যাসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ প্র’য়াত উত্তমকুমারের সহ অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়! বর্ষীয়ান অভিনেতার প্র’য়াণে গভীর শোকের ছায়া গভীর শোকের ছায়া টলিউডে
পুলিশ ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে যেখানে দেখা যায় ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় অতিরিক্ত গতির কারণে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফুটেজ দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন হেলমেট থাকলে হয়তো এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। পাশাপাশি উঠেছে আরও দুটি বড় প্রশ্ন ঠিক কীভাবে এত অল্প বয়সে তিনি এমন শক্তিশালী রেসার বাইক পেলেন এবং বাড়ি থেকে বেরোবার সময় কেউ তাকে নিরাপত্তা সম্পর্কে সতর্ক করল না কেন। সমাজকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে এই করুণ মৃত্যু।
