টলিউডের কার্তিক ঠাকুর বলা হত অভিনেতা অভিষেক চ্যাটার্জিকে (Abhishek Chatterjee) । দুই দশক আগেও তিনি নায়কের ভূমিকায় পর্দা কাঁপাতেন। অসামান্য ছিল তার অভিনয় দক্ষতা। সুদর্শন চেহারায় সেই সময় ইন্ডাস্ট্রি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কেও (Prosenjit Chatterjee ) সমানে সমানে টক্কর দিতেন তিনি। তবে বিগত কিছু বছরে সিনেমার তুলনায় তাকে ধারাবাহিকেই বেশি অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল।
এই অভিনেতার অভিনয়ে মজে ছিল বাঙালি। তার গুণগ্রাহীর সংখ্যাও কম ছিলনা। তার একাধিক সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে বাঙালি দর্শক। বলা বাহুল্য তরুণ মজুমদার পরিচালিত সিনেমা পথভোলায় অভিনয় করে তিনি প্রথম পা রেখেছিলেন অভিনয়ের অঙ্গনে। বাড়িওয়ালি, দহন, মধুর মিলন , সংঘর্ষ, ফিরিয়ে দাও, মায়ের আঁচল, আলো , নীলাচলে, ওয়ান, কিরীটি-এর মতো একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে চমকপ্রদ উত্থান হয় তার।
হঠাৎ করেই বিগত ২৪শে মার্চ হঠাৎই মাত্র ৫৭ বছর বয়সে সবাইকে ছেড়ে চলে যান বাংলার এই জনপ্রিয় অভিনেতা। মৃত্যুর দিন সকালেও শুটিংয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাতে হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তিনি। মৃত্যুর পর একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে যান অভিনেতার স্ত্রী সংযুক্তা ও মেয়ে ডল।
অভিনেতার মৃত্যুর পর এখন শুধুমাত্র তার স্মৃতিটুকুকে আঁকড়েই জীবন কাটাচ্ছেন অভিনেতার স্ত্রী ও মেয়ে। সংযুক্তা মনে করেন অভিষেক সশরীরে না থাকলেও তার সঙ্গে সব সময় রয়েছেন। আর তাই এই বছরে অভিষেকের ইচ্ছে অনুযায়ীই বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন অভিনেতা।
পুজোর জন্য এই বছরও সংযুক্তা অভিষেকের পছন্দমতো একচালার দুর্গাপ্রতিমা এনেছিলেন বাড়িতে। ধুমধাম করে মাতৃ আরাধনা করেছেন। সংযুক্তার কথায়, পাশে না থাকলেও সবটা আড়াল থেকে পরিচালনা করেছেন অভিষেকই। সংযুক্তা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘সত্যি, হয়তো কেউ বিশ্বাস করতে পারবেন না। খুব ভালো পুজো হয়েছে। অভি যখন ছিল তখন আমাকে কোনও দায়িত্ব নিতে হতনা। আমি কোনও সিদ্ধান্ত নিতাম না। তাই এবার কিছুটা ভয় করছিল। কারণ সব সিদ্ধান্ত, নিয়মকানুন আমাকেই করতে হয়েছে। বোধন থেকে বিসর্জনের পুরো দায়িত্বই এবার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সংযুক্তা।
অভিষেকের উপস্থিতি তিনি টের পান। আর সেই কারণেই সামাজিক অচলায়তনকে ভেঙে চলেছেন তিনি প্রতিটা মুহূর্তে। আর এই বিশ্বাসেই তিনি অভিষেকের দেওয়া নোয়া পরে সিঁদুরও খেলেছেন তিনি। সংযুক্তার কথায়, আমি চিরকাল ওঁর স্ত্রী হয়েই বেঁচে থাকব। আমি অন্তর থেকে শুধু ওকেই ভালোবাসি, ওঁর পরিচয়েই বেঁচে আছি। আর তাই হিন্দু রীতি অনুযায়ী যেখানে বিধবারা সিঁদুর পরেন না, পুজোয় সিঁদুর খেলেন না। সেখানেই ব্যতিক্রমী সংযুক্তা।