জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

শুনতে পান না, তবুও নাচই তাঁর জীবন!—নাচের মঞ্চে অনন্য নজির গড়লেন পূজা, গুরুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আবেগঘন পোস্ট! জানেন, কার কাছে নাচ শিখেছেন তিনি?

বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ডান্স রিয়ালিটি শো “ডান্স বাংলা ডান্স” (Dance Bangla Dance) বছরের পর বছর ধরে বহু প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পীকে সামনে এনেছে। এই মঞ্চ শুধুই প্রতিযোগিতার জায়গা নয়, বরং স্বপ্নপূরণের পথ। কঠোর পরিশ্রম আর নাচের প্রতি নিখাদ ভালোবাসার মাধ্যমে প্রতিযোগীরা নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। বিচারকদের নম্বরের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে দর্শকদের ভালোবাসা, যা একজন প্রতিযোগীর ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়।

প্রতিযোগীরা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, কিন্তু কেউ যদি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে এই মঞ্চে উঠে আসেন, তবে তা সত্যিই অনন্য। এবার “ডান্স বাংলা ডান্স”-এর নতুন সিজনে এক অভূতপূর্ব প্রতিভার আগমন ঘটেছে—পূজা হালদার (Puja Halder)। পূজা শুধুমাত্র নৃত্যে দক্ষ নন, তিনি একজন মুখ ও বধির (speech and hearing impaired) শিল্পী। তার এই বিশেষ পরিস্থিতি তাকে কখনও থামিয়ে রাখতে পারেনি; বরং তার প্রতিভা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

image 49

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে নাচের মতো একটি শিল্পে নিজের জায়গা করে নেওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু পূজা তার সীমাবদ্ধতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন। তিনি সংগীত শুনতে পান না, কথাও বলতে পারেন না, তবুও শুধুমাত্র অনুভবের উপর নির্ভর করেই নাচ করেন। তার নৃত্যের প্রতিটি ভঙ্গিমায় আবেগ ফুটে ওঠে। বিচারকরাও এই মঞ্চে তার পারফরম্যান্স দেখে বিস্মিত হয়েছেন এবং তাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন।

তবে পূজার এই সাফল্য একদিনে আসেনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি নাচের প্রতি ভালোবাসা লালন করেছেন, মুখ ও বধির জানার পরে তাঁর বাবা তাকে ছেড়ে চলে যান। মা একা হাতে বড় করেছেন পূজাকে। পূজার অডিশন রাউন্ড এর নাচ দেখে বিচারক এবং মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী এত খুশী হন যে বলেই ফেলেন সেই আইকনিক ডায়ালগ “ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত” এবং প্রথম ফুল ও দেন তাকে।

আর তার নৃত্যগুরু ছিলেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। সম্প্রতি, নিজের নৃত্যশিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, প্রশিক্ষক ময়ূখ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি দিয়ে পূজা একটি আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করে লেখে, ‘এই মানুষটির জন্যই আমি আজ এখানে, উনি যদি আমায় শেখাতে রাজি না হতেন, তাহলে হয়তো আমি স্বপ্ন দেখার সাহসই পেতাম না।” তার এই পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে, যেখানে নেটিজেনরা তার সংগ্রামের কাহিনি শুনে আপ্লুত।

পূজার এই সাফল্য শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন, যদি ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় থাকে, তবে কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। “ডান্স বাংলা ডান্স”-এর মঞ্চে এই অসাধারণ প্রতিভার উত্থান আবারও প্রমাণ করল, নাচ কেবলমাত্র কানের শোনা সুরের উপর নির্ভর করে না, বরং মনের গভীর অনুভূতিই একজন শিল্পীকে তৈরি করে। এখন শুধু দেখার, পূজা এই যাত্রায় কতদূর যেতে পারেন!

Piya Chanda