আজ তাঁর নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘জারোয়ার ঝুমকো’, ‘যমুনা ঢাকি‘, ‘তুমি রবে নীরবে’, তিনি আর কেউ নন অভিনেত্রী ‘শ্বেতা ভট্টাচার্য’ (Sweta Bhattacharya)। অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিটি দৃশ্যে নিজেকে একেবারে নতুন করে গড়ে তোলেন। বর্তমানে ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’ (Kon Gopone Mon Bhesechhe) ধারাবাহিকে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা, এই আজকের নায়িকা শ্বেতার জীবনে হঠাৎ করে আসেনি। ক্যামেরার পেছনে রয়েছে অজস্র অন্ধকার রাতের গল্প, না বলা অসংখ্য কথা।
একসময় এমনও দিন কেটেছে, যখন দুপুরবেলা পাতে নুন-ভাত থাকলেও রাতের খাবার জোটানো ছিল এক প্রকার অসাধ্য ব্যাপার। শ্বেতার ছোটবেলার সেই দিনগুলোর গল্প যেন কোনও ধারাবাহিকের গল্পের থেকেও বেশি বেদনার, বেশি যন্ত্রণাময়। তখন তাঁর পরিবার ছিল যৌথ, ঘর বলতে একটা দমবন্ধ করা কামরা ছিল, যেখানে নিজের মতো করে নিশ্বাস নেওয়াটাও ছিল চ্যালেঞ্জ এর সমান। একটুখানি শান্তি, একটুখানি আরাম আর নিজের মতন করে বাঁচা—এই ছিল স্বপ্ন।

আর সেই স্বপ্ন পূরণের আশাতেই অল্পবয়সী শ্বেতা ঠিক করে ফেলেন এবার তিনিই বদলাবেন সবকিছু। শ্বেতা ভট্টাচার্যের বাবা-মা—দুজনেই ছিলেন শ্বেতার সীমাহীন সংগ্রামের সঙ্গী। বাবার একই জামাকাপড় বারবার সেলাই করে ব্যাবহার করতেন, মায়ের জন্য একটা শাড়ি কেনারও ক্ষমতা ছিলনা। নিজে কিছু খেয়ে না খেয়ে, কেবল সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তাঁরা লড়াই চালিয়ে গেছেন, সেই বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোই হয়ে উঠেছিল শ্বেতার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
আজ যখন তিনি সফল, নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন ছোট ও বড় দুই পর্দাতেই, তখন শ্বেতা পিছনে ফিরে তাকান না কেবল, বরং সেই পুরনো দিনগুলোকেই সামনে রেখে এগিয়ে চলেন। অভিনেত্রীরা আগে বাথরুমের থেকেও ছোট ঘরে থাকতেন, নিজের সাফল্যের পর তাঁর বাবা মাকে তিনি দুটো ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন, এ যেন তাঁর নিজের কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। অভিনয়, গ্ল্যামার, লাইমলাইটের বাইরেও শ্বেতা ভট্টাচার্য খুঁজে পেয়েছেন এক অন্য পরিচয়, আদর্শ কন্যা হিসেবে।
আরও পড়ুনঃ যেমন বাবা তাঁর তেমন মেয়ে! বাবার মতোই প্রতিভাবান সুন্দরী, মেধাবী, তবুও অভিনেত্রী নন! টোটা রায় চৌধুরীর মেয়েকে চেনেন?
দাদাগিরির মঞ্চে এসে একবার শ্বেতা জানিয়েছিলেন অতীতের এই দিনগুলোর কথা এবং তাঁর অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে মা বাবার অবদানের কথা। এরপর তিনি এক সাক্ষাৎকারেও বলেছিলেন, তাঁর জীবনটা তিনি উৎসর্গ করতে চান বাবা-মার জন্য। যতদিন বাঁচবেন, তাঁদের মুখে হাসি রাখার লড়াইটাই চালিয়ে যাবেন। আর হয়তো এই কারণেই শ্বেতা শুধুই একজন অভিনেত্রী নন, তিনি আজ বাংলার হাজার হাজার বাড়ির মেয়েও বটে।