জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

‘গল্প হলেও সত্যি’ ছিল তাঁর শেষ ছবি! তারপর নামটুকুও পাল্টে গেল ‘কৃষ্ণা বসু’র! বাবার স্বপ্ন ছিল অভিনয়, সমাজের চাপে আর নাম বদলের আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছিল অভিনেত্রীসত্তা! তপন সিংহর ছবির সেই অভিনেত্রীর না বলা যন্ত্রণার কাহিনি!

১৯৬৬ সালের ১৩ অক্টোবর মুক্তি পায় তপন সিনহার কালজয়ী ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’ (Galpo Holeo Satti)। রবি ঘোষ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, ছায়া দেবী থেকে শুরু করে পার্থ মুখোপাধ্যায়— নামী শিল্পীর অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছিল ছবিটি। তবে সেদিন দর্শকের মনে আলাদা করে দাগ কেটেছিল এক সাদাসিধে চরিত্র, নাম ‘কৃষ্ণা’। একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহকর্মীর ভূমিকায় তাঁর উপস্থিতি ছিল অনবদ্য, স্পষ্টভাবে বাস্তব ও নিঃসৃত আবেগে ভরপুর। সেই চরিত্রেই অভিনয় করেছিলেন ‘কৃষ্ণা বসু’ (Krishna Bose)। পর্দায় কৃষ্ণা নামটি থাকলেও বাস্তবে পরে তিনি পরিচিত হন ‘মন্দিরা চৌধুরী’ (Mandira Chowdhury) নামে।

এই রূপান্তরের পেছনে লুকিয়ে আছে এক নীরব চাপের ইতিহাস। অভিনয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকা সত্ত্বেও বিয়ের সিদ্ধান্তে থমকে যায় তাঁর কেরিয়ার। হবু শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর নাম কৃষ্ণা নয়, মন্দিরা হবে। এমনকি বিয়ের কার্ডেও পাল্টে যায় নাম। কৃষ্ণা তখন কিছু বলার সাহস পাননি। সময়টাই ছিল এমন, যখন সমাজে নারীর প্রতিবাদপ্রবণতা সেভাবে স্থান পায়নি। একসময়ের উদীয়মান অভিনেত্রী, যাঁর হাতে একাধিক কাজ ছিল!

তিনিই শেষমেশ সব কন্ট্র্যাক্ট বাতিল করে অভিনয়কে বিদায় জানান। একান্ত সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণা ওরফে মন্দিরা জানিয়েছেন, মাত্র আট বছর বয়স থেকে তিনি অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বাবা নিজেও ছিলেন মঞ্চাভিনেতা, কাজ করেছিলেন স্বয়ং শিশির ভাদুড়ির সঙ্গে। বাবার সেই স্বপ্নই মেয়ের মধ্যে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা ছিল। কিন্তু সামাজিক বাধ্যবাধকতা আর পরিবারের চাপেই তাঁকে অভিনয় ছাড়তে হয়। তবুও আজও সেই সময়ের স্মৃতি তাঁর কাছে অমূল্য।

পর্দা থেকে দূরে থাকলেও মন থেকে কখনও থিয়েটারকে সরাতে পারেননি তিনি। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তপন সিনহার কাজের জন্য। তবে সেদিন মঞ্চে তাঁকে ‘কৃষ্ণা’ বলে ডাকা হয়নি, পরিচিতি এসেছিল শুধুই ‘মন্দিরা’ নামে। এই দিকটাও তাঁকে কষ্ট দেয়। যদিও সময় অনেক কিছু পাল্টে দিয়েছে। আজ তিনি আবারও ফিরতে চান পর্দায়।

আরও পড়ুনঃ এবার রান্নাঘরে চার বছরের ছোট শেফ ইশান! মায়ের জন্য নিজের হাতে রুটি বানাল ছেলে! ছেলের কীর্তি শেয়ার করে আবেগপ্রবণ নুসরত!

সিনেমা হোক বা ধারাবাহিক কিংবা ওটিটি, অফার এলেই ফিরতে রাজি তিনি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণা বসুর গল্প যেন শুধু এক অভিনেত্রীর হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং এক প্রজন্মের চুপিচুপি আত্মসমর্পণের কথা, যাদের হয়ে প্রতিবাদ করা যায়নি, সুযোগও দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁর অভ্যন্তরীণ আগুন এখনও নিভে যায়নি। কৃষ্ণা এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন শিল্পীসত্তাকে, অপেক্ষায় রয়েছেন এক নতুন সূচনার।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।

Rimi Datta

রিমি দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। কপি রাইটার হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় চার বছরের অভিজ্ঞতা।