জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“বাংলায় গান গেয়ে রোজগার করা কঠিন, এখনও লড়ছি”— ত্রিশ বছরের সংগীত সফরে অকপট রূপঙ্কর!

বাঙালির জীবনে গান মানেই এক অন্যরকম আত্মিক সংযোগ। আর সেই সংযোগে যাঁরা সুর মিশিয়ে দেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম রূপঙ্কর বাগচী। বাংলা গানকে জীবনের রসদ করে যিনি তিন দশক ধরে এগিয়ে চলেছেন, এবার তিনি নিজেই তুলে ধরলেন বাংলা গানের বর্তমান বাস্তবতা। শুক্রবার জিডি বিড়লা সভাঘরে বসতে চলেছে তাঁর বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান, যেখানে গাইবেন তাঁর গাওয়া বহু গান, বিশেষ করে বর্ষার গান। তবে এই উৎসবের পাশাপাশি রূপঙ্করের কণ্ঠে উঠে এল শিল্পী জীবনের লড়াইয়ের কথাও।

শিল্পজগতে পা রাখার প্রথম দিনগুলো মনে করে রূপঙ্কর বললেন, “আমি অত্যন্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। গান গেয়ে রোজগার না করলে খেতে পাব না, এই চিন্তাটাই মাথায় ছিল।” জীবনের মূল রসদ করেই গানকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। কোনও প্রস্তুতি ছিল না, ছিল কেবল গান গেয়ে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা। তবে তিন দশক কেটে গেলেও সেই লড়াই আজও অব্যাহত। আজও সেই একই মানসিকতা নিয়েই এগিয়ে চলেছেন রূপঙ্কর।

বর্তমান যুগে বাংলা গান গেয়ে শুধুমাত্র আর্থিক দিক থেকে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন— বলছেন রূপঙ্কর। তাঁর কথায়, “বেতারে আর বাংলা গান বাজে না। স্বাধীন বাংলা আধুনিক গান গেয়ে উপার্জনের রাস্তা প্রায় বন্ধ। বড় প্রযোজনা সংস্থার ছবিতে গান পেলে হয়তো কিছুটা সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু নতুন বাংলা গান দিয়ে নিজেকে দাঁড় করানো খুব কঠিন।” তাঁর মতে, পুরনো গান গেয়ে চলাই এখন অনেকের একমাত্র উপায়।

তবে কি নতুন বাংলা গান নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করতে পারছে না? রূপঙ্করের জবাব স্পষ্ট— দোষ গায়কদের নয়। বরং তাঁদের প্রচারের কোনও মাধ্যম নেই বলেই গান পৌঁছচ্ছে না শ্রোতার কাছে। “আমাদের সময়ে রেকর্ড কোম্পানিগুলো প্রচারের দায়িত্ব নিত। এখন শিল্পীরা নিজেরাই কীভাবে নিজেদের প্রচার করবে?”— প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর মতে, শিল্পীরা ব্যবসায়ী নন, অথচ এখন নিজেদের বিক্রয়ও তাঁদেরই করতে হয়।

রূপঙ্কর কৃতজ্ঞ কবীর সুমন, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা চক্রবর্তীর মতো পথপ্রদর্শকদের প্রতি। সেই সঙ্গে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র, জয় সরকার, সোমলতা আচার্যের মতো সঙ্গীদের নামও। যদিও বিতর্ক থেকেও তাঁর সম্পর্ক বরাবরই খোলামেলা। তাঁর কথায়, “বিতর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখিনি। প্রত্যেক পেশাতেই সমস্যা থাকে, আমিও সেগুলো সামলেছি আমার মতো করে।” ত্রিশ বছরের সফরের আনন্দ-ভালবাসা, চ্যালেঞ্জ আর বাস্তবতা মিলিয়েই এক শিল্পীর অকপট স্বীকারোক্তি— বাংলা গান গাওয়া শুধু প্রেম নয়, জীবিকা বানানো এখন এক বড় লড়াই।

Piya Chanda