পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে চরম বিপদের সম্মুখীন ‘রাই’! বাংলা ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ‘আরাত্রিকা মাইতি’ (Aratrika Maity), সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন ধারাবাহিকের ব্যস্ততা থেকে। কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মিঠিঝোরা’ (Mithijhora)। বড়পর্দায় প্রথম ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’তে লক্ষ্মীপ্রিয়ার চরিত্রের শ্যুটিংও শেষ। পর্দায় যেমন অনায়াস হাসি আর প্রাণবন্ত উপস্থিতি নিয়ে দর্শকের মন জয় করেন, বাস্তব জীবনেও তিনি সমান উচ্ছ্বল। কিন্তু এবার তিনি এক ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হলেন!
কাজের ফাঁকে এবার নিজেকে সময় দিতে পাড়ি দিয়েছেন পাহাড়ে। কিন্তু সেই নিরিবিলি ভ্রমণেই ঘটেছে এমন এক ঘটনা, যা মুহূর্তের মধ্যে আনন্দকে ভয়ে রূপান্তরিত করেছে! আরাত্রিকার এই সফরের গন্তব্য ছিল শিলিগুড়ির কাছে শিটং। বর্ষার পাহাড়, মেঘের চাদরে মোড়া দৃশ্য— সব মিলিয়ে যেন পোস্টকার্ডের মতো এক স্বপ্নপুরী। ইনস্টাগ্রামে ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া ছবিগুলোতেও দেখা গেছে তাঁর অনাবিল হাসি। কখনও বাঁশের বেঞ্চে বসে দুই হাত মেলে, কখনও আবার এলোমেলো চুলে ঢিলেঢালা শার্ট ও ব্যাগি জিন্সে অদ্ভুত স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিমা। তবে ছবিগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত, যা তখনও কেউ আঁচ করতে পারেনি।
অভিনেত্রী ঠিক করেন দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত ছাঙ্গে জলপ্রপাত দেখতে যাবেন। স্থানীয়রা যেমন বলেন, এটি একেবারেই না-মিস করার মতো জায়গা। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর পথ মোটেই সহজ নয়—চড়াই-উতরাই, স্যাঁতসেঁতে মাটি আর ঘন জঙ্গলের পথ পেরোতে হয়। তিনিও রওনা দেন, কিন্তু অর্ধেক রাস্তা গিয়েই ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাঁকে। কারণ, পথের মাঝে উপস্থিত হয় এমন এক অবাঞ্ছিত আতঙ্ক—জোঁক! স্যাঁতসেঁতে ঝোপঝাড়ে পা দিতেই শরীরের বিভিন্ন অংশে একের পর এক জোঁক লেগে যায়। মুহূর্তে জামাকাপড় ভেদ করে তারা রক্ত চুষতে শুরু করে।
এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে কোনওমতে ফিরে এসে আরাত্রিকা সমাজ মাধ্যমে একটি সতর্কবার্তা দেন। ক্যাপশনে স্পষ্ট করে লিখেন, বর্ষাকালে বা ভিজে আবহাওয়ায় এমন অঞ্চলে গেলে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে নুন বা লবণ, যা জোঁক তাড়াতে একমাত্র কার্যকর উপায়। তিনি আরও পরামর্শ দেন, যারা বর্ষায় পাহাড়ি ট্রেকিংয়ের পরিকল্পনা করছেন, তারা যেন সতর্ক থাকেন এবং প্রয়োজনে এমন জায়গা এড়িয়ে চলেন। অভিনেত্রীর কথায়, “যাঁরা দার্জিলিং -এর বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরতে আসেন এই সতর্কতা তাঁদের জন্যই। ছাঙ্গে জলপ্রপাত এরকম একটি জায়গা যেটা কোনওভাবেই মিস করা যায় না।
আমরাও যাব ঠিক করি, কিন্তু অর্ধেক রাস্তা পৌঁছে ফিরে আসতে বাধ্য হই। কারণ একটাই ‘জোঁক’! একে এই জায়গায় খুব চড়াই উতরাই , তারপর দুর্গম এবং স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায়, ঘন ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেখানে পা দিতেই অজস্র জোঁক পিলপিল করে জামা-কাপড়ে, এমনকি শরীরে আটকে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে রক্ত চুষে নেয়। যদি একবার জোঁক লাগে তো কোনওভাবেই আর ছাড়াতে পারবেন না, যদি না আপনার সাথে নুন/লবণ থাকে। তাই এইসব অঞ্চলে যাঁরা ট্রেকিং করতে আসেন, অবশ্যই সঙ্গে ওই জিনিসটি রাখবেন, আর পারলে এমন জায়গায় বিশেষত বর্ষাকালে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।”
পোস্টের সঙ্গে তিনি দিয়েছিলেন জোঁকের ছবি এবং নিজের পায়ের ক্ষতচিহ্নের ছবিও, যা দেখে ভক্তরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তবে সকলকে আশ্বস্ত করে আরাত্রিকা জানিয়েছেন, তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং খুব শিগগিরই কাজে ফিরবেন। তাঁর এই অভিজ্ঞতা সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই একদিকে যেমন উদ্বেগ বেড়েছে, তেমনি অনেক পর্যটক তাঁর সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। পাহাড়ের বর্ষা যেমন রূপসী, তেমনই কখনও কখনও মারাত্মক বিপদও ডেকে আনতে পারে—আরাত্রিকার এই সফর যেন তারই জীবন্ত প্রমাণ।