জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

আজ ‘অপরাজিত’ হয়ে দর্শকের হৃদয়ে অমর জীতু কামাল! আবার আর্য সিংহ রায়ের জন্য মেয়েরা পাগল! একসময় প্রযোজকের গেটের বাইরে সারাদিন অপেক্ষা, অপমান, উপহাস আর প্রত্যাখ্যান—কিছুই তাকে আটকাতে পারেনি! কেমন ছিল তাঁর শুরুর দিনগুলো? চোখে জল আসবে আপনারও!

বাংলা বিনোদন জগতের এক অমূল্য প্রতিভার নাম জীতু কামাল (Jeetu Kamal)। গতকাল ছিল তাঁর ৩৬তম জন্মদিন, আজকে দাঁড়িয়ে ফিরে দেখা যাক এমন এক শিল্পীর গল্প, যাঁকে চিনতে টলি ইন্ডাস্ট্রি অনেকটা দেরি করেছে। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তিনি বহু বছর উপেক্ষিত হয়েছেন। শুরুটা ছিল একেবারে আলোর আড়ালে, একটি নাট্যদলের হয়ে আলো ফেলা আর আবহসঙ্গীতের দায়িত্বে তিনি কাজ করতেন। মনের গভীরে স্বপ্ন ছিল একদিন বড় পরিচালক হওয়ার। সেই স্বপ্নে ভর করেই অভিনয়ও চলছিল ছোট ছোট চরিত্রে।

তবে নিজের ওপর আস্থা ছিল অটল। তাই প্রতিকূলতা যতই আসুক, হাল ছাড়েননি। ছোটপর্দাই তাঁকে প্রথম অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি দেয়। ‘সাঁজবেলা’ দিয়ে বড় চরিত্রে প্রথম সুযোগ পান জীতু, এরপর একে একে ‘ভোলা মহেশ্বর’, ‘রাগে অনুরাগে’, ‘মিলন তিথি’র মতো ধারাবাহিকে দর্শকদের মন জয় করেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও হাতে কাজ সবসময়ই থাকত অল্পই। এমনকি সমাজ মাধ্যমেও নানা সময় তাঁকে ট্রোল করা হয়েছে। কিন্তু জীতুর জবাব দিয়েছেন নিজের কাজ দিয়েই।

ব্যক্তিগত লড়াই আর অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠাই তাঁকে অনেকের থেকে আলাদা করে তুলেছে। অভিনেতা হিসেবে তাঁর কেরিয়ারে আসল মোড় ঘোরে ‘অনীক দত্ত’ পরিচালিত ‘অপরাজিত’ ছবির জন্য। সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে অভিনয় করার দায়িত্ব পান তিনি। প্রথমে শুধুমাত্র তরুণ সত্যজিৎ ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত পুরো ছবিতেই বড়বেলার রূপে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়। চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তিনি মাসের পর মাস নিজেকে গৃহবন্দী করেছিলেন! প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি, হাঁটাচলা, কথাবার্তা আয়ত্ত করেছেন নিখুঁতভাবে।

এমনকি দাঁতের সামান্য পার্থক্যের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন, যাতে পর্দায় চরিত্রে কোনও ত্রুটি না থাকে। সমালোচকদের কটাক্ষ উপেক্ষা করে তিনি প্রমাণ করেছেন, পরিশ্রমের কাছে সন্দেহকে হার মানতেই হয়। ‘অপরাজিত’র পোস্টার প্রকাশের দিন থেকেই প্রশংসার ঝড় ওঠে। শুধু বাংলায় নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও তাঁর অভিনয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। সমালোচকেরাও স্বীকার করেছেন, এ যেন সত্যিকারের মানিক বাবুকে পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠতে দেখছেন।

এই পেশাদারিত্বই তাঁকে আবারও একেবারে দু’টি ভিন্ন চরিত্রে উজ্জ্বল করেছে। কখনও ‘গৃহপ্রবেশ’ ছবির মেঘদূত, কখনও বা ছোটপর্দায় জনপ্রিয় ধারাবহিক ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর আর্য সিংহ রায়। আজ তিনি সত্যিই সবার মনে রাজত্ব করছেন। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে অনেক লুকনো দুঃখ আর অভিমান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি অকপটে স্বীকার করেছিলেন, একটা সময় সকাল থেকে রাত অবধি প্রযোজকের অফিসের বাইরে বসে থেকেও দেখা পাওয়া যেত না।

অনেকেই ফিরিয়ে দিতেন শুধু অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে। সেই অপেক্ষা, সেই প্রত্যাখ্যান তাঁকে থামাতে পারেনি। বরং দিন দিন নিজেকে গড়েছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, অভিনয়ে ডুব দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহ বিচ্ছেদের যন্ত্রণাও সহ্য করতে হয়েছে একটা সময়। আজ তিনি মহাকালকে নিজের শক্তির উৎস মনে করেন। আজও তাঁর একটাই দাবি এবং ক্ষোভ যে, নতুনদের যদি সুযোগই না দেওয়া হয়, তবে অভিজ্ঞতা আসবে কীভাবে?এই প্রশ্নটা আজও বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভীষণ প্রাসঙ্গিক।

Piya Chanda

                 

You cannot copy content of this page