রিয়া গঙ্গোপাধ্যায়। নামটি এখন শুধু একজন অভিনেত্রীর নয়, বরং একজন এমন নারীর প্রতীক, যিনি নিজের সম্পর্কের টানাপোড়েন, আইনি লড়াই আর মানসিক ক্লান্তির মাঝেও মানবিকতার জায়গা ছাড়েননি। স্বামী অরিন্দম চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর বিবাহিত জীবনের কলহ ও দূরত্ব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সেই সম্পর্ক ভাঙার দাগ আজও রিয়ার জীবনে স্পষ্ট। তবু পুজোর আনন্দের সময় আচমকাই যখন মৃত্যুর খবর এল, তখন সমস্ত অভিমান ভুলে ছুটে গেলেন তিনি।
তৃতীয়ার দিন। শহর তখন উৎসবে মেতেছে, পুজোর রঙে ভরে উঠেছে চারপাশ। সেই সময়েই রিয়া জানতে পারেন, তাঁর শাশুড়িমা আর নেই। খবরটা যেন হঠাৎ একটা বজ্রাঘাত। ব্যক্তিগত জীবনে যতই অশান্তি থাকুক না কেন, এক মুহূর্ত দেরি করেননি অভিনেত্রী। হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন সবার আগে তিনিই। সেই মানুষটির শেষ যাত্রায় উপস্থিত থাকার দায়িত্বও নিজের কাঁধেই তুলে নেন। ভাগ্যের অদ্ভুত খেলায়, সেই শাশুড়ির মৃত্যু সনদে স্বাক্ষরও করতে হয় তাঁকে নিজেকেই।
রিয়া লিখেছেন, “মুহূর্তের মধ্যে সব বদলে গেল। ঈশ্বরের কী অদ্ভুত খেলা! তোমায় দেখতে হাসপাতালে সবার আগে আমি গিয়ে পৌঁছোলাম। সেইসঙ্গে তোমার ডেথ সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরও আমায় করতে হল। তোমার শেষকৃত্য করার সময় সব বিবাদ, রাগ-দুঃখ, আইনি লড়াই তথা অহঙ্কার একনিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখলাম।” এই কথাগুলো শুধু একটি মৃত্যুর শোক নয়, বরং জীবনের গভীর শিক্ষার প্রতিফলনও। কখনও কখনও মৃত্যু এমন এক আয়না দেখিয়ে যায়, যেখানে সমস্ত তিক্ততা তুচ্ছ হয়ে যায়।
এই শাশুড়িমাই একদিন রিয়াকে বলেছিলেন, “সব ঠিক হয়ে যাবে, সময়ই সব মিটিয়ে দেবে।” সেই কথাগুলোই যেন এখন তাঁর মনে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। জীবনের ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে রিয়া বুঝতে পারছেন, সম্পর্ক যতই জটিল হোক, হৃদয়ের জায়গাটা যদি একবার তৈরি হয়, সেটি সহজে মুছে যায় না। তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে অপরাধবোধ আর গভীর অনুশোচনা— “আমার একটাই আফসোস, তুমি শেষ সময় রিকু, রাহিকে কাছে পেলে না। আর তার জন্য আমায় সারাজীবনের জন্য অপরাধী বানিয়ে গেলে।”
আজ রিয়া হয়তো আবার অভিনয়ে ফিরবেন, নতুন জীবন শুরু করবেন, কিন্তু শাশুড়ির মৃত্যুর সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে চিরদিন তাড়া করবে। হয়তো এই ঘটনার মধ্যেই তিনি বুঝে গেছেন, জীবনের সব লড়াইয়ের শেষে রয়ে যায় কেবল ভালোবাসা আর ক্ষমা। আর সেই উপলব্ধিই হয়তো তাঁকে আরও সংবেদনশীল, আরও গভীর করে তুলেছে একজন মানুষ হিসেবে।
আরও পড়ুনঃ দেশের মাটিতে রুকমার কাছে পিছিয়ে পড়ে দুরন্ত কামব্যাক শ্রুতির! ‘রূপ আসল নয় প্রতিভাই আসল! তাইতো মূল চ্যানেলে শ্রুতি, আর নতুন চ্যানেলে রুকমা’ দুই অভিনেত্রীর তুলনা টেনে বি’তর্ক নেটিজেনদের!
এই ঘটনাই প্রমাণ করে, আলো-ঝলমলের গ্ল্যামার দুনিয়ার বাইরেও অভিনেতাদের জীবন ঠিক আমাদের মতোই — আবেগ, ক্ষতি, অনুতাপ আর ভালোবাসার গল্পে ভরা।