বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে অভিনেতা ‘বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়’ (Biplab Chatterjee) এমন এক নাম, যাঁকে শুধু অভিনয়ের জন্য নয়, স্পষ্টভাষী মানসিকতার জন্যও আলাদা করে চিনে রেখেছেন সকলে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে দর্শক তাঁকে কখনও কঠোর ভিলেনের চরিত্রে, কখনও সমাজের প্রতিবাদী মুখ হিসেবে দেখেছেন, কিন্তু পর্দার বাইরের মানুষটি বরাবরই একরোখা এবং অকপট। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তিনি নিজের নীতিতে অটল থেকেছেন, কখনও জনপ্রিয়তার জন্য বা স্বার্থে আপস করেননি।
থিয়েটার থেকে সিনেমা এবং সেখান থেকে রাজনীতির পথে— সব জায়গাতেই তাঁর উপস্থিতি ছিল একেবারে নিজের শর্তে। একসময় কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীও ছিলেন তিনি, আর সেই রাজনৈতিক সচেতনতা আজও তাঁর বক্তব্যে ফুটে ওঠে প্রায়ই। সম্প্রতি টলিউড একটা প্রসঙ্গ খুব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেব থেকে শুরু করে প্রসেনজিৎ সবাই এখন দর্শকদের বলছেন— ‘বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান, সিঙ্গেল স্ক্রিন বাঁচান।’ এই নিয়ে চলতি কিছু মাসে একাধিক বৈঠকও হয়েছে, তাতে কিছু নীতিও গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে, খুব একটা সুরাহা হয়নি। এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে এক সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হয়, আদৌ কি এই ডাক বাস্তবায়িত হচ্ছে? বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “এই কথাটা বলে সবাই, কিন্তু দাঁড়ায় না কেউ! কেবল স্লোগান দিয়ে শিল্প বাঁচানো যায় না, দরকার ভালো কনটেন্ট, আন্তরিক চেষ্টা আর দর্শকের সঙ্গে সত্যিকারের যোগ।” তাঁর কথায়, বাংলা সিনেমাকে নিয়ে আবেগ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু সিনেমা তো শেষ পর্যন্ত দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার মাধ্যম।
তাই ছবিটা যদি নিজের মতো করে মানুষকে ছুঁতে না পারে, দর্শকও ফিরবে না। তিনি বলেন, “মনোরঞ্জনের জায়গা থেকে ছবি যদি আনন্দ না দেয়, তাহলে মানুষ কেন আসবে হলে?” এই কথাটাই যেন একরকম আয়না তুলে ধরার মতো ইন্ডাস্ট্রির সামনে। কারণ, ভালো ছবি তৈরি হলে দর্শক কখনও মুখ ফিরিয়ে নেন না— এই বিশ্বাস তাঁর আজও অটুট। অভিনেতার মতে, শুধু দর্শককে দোষ দিয়ে লাভ নেই, বরং নির্মাতাদের আগে নিজেদের কাজের দিকে তাকানো দরকার।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যারা ছবি তৈরি করছে, তারা কি নিজেরা বলতে পারবে তাদের ছবি সত্যিই ভালো?” এক্ষেত্রেই তাঁর যুক্তি সহজ— স্বাভাবিক, সহজবোধ্য গল্পে যদি মন ছুঁয়ে যাওয়া উপাদান থাকে, তাহলে দর্শক শতবারও হলে ফিরবেন। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ গল্প বা অগভীর চিত্রনাট্য হলে মানুষ একবার দেখেই ভুলে যায়। সবশেষে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য যেন গোটা ইন্ডাস্ট্রির উদ্দেশে এক স্পষ্ট বার্তা, দায়িত্বটা শুধু দর্শকের নয়, শিল্পীদেরও।
আরও পড়ুনঃ লেখিকা হিসেবে নিজের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন সুদীপা! ‘চারুলতা ২০১১ বানিয়ে আফসোস!’ নিজের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্টির কারণ কী? জানালেন একদা রান্না ঘরের কর্ত্রী
বাংলা সিনেমাকে বাঁচাতে হলে, তার মান উন্নত করা জরুরি। দর্শককে দোষারোপ নয়, বরং নিজেদের প্রতি আরও সৎ হওয়া দরকার। তাঁর অকপট মন্তব্যে কেউ কেউ কড়া ভাষা খুঁজে পেতে পারেন, কিন্তু সেই কথার ভিতরেই আছে এক বাস্তবিক, মানবিক সতর্কতা— বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধুমাত্র তার সৃষ্টিশীলতার উপর, মুখের কথায় নয়, কাজের আন্তরিকতায়। দর্শক হিসেবে আপনারা ঠিক কতটা সমর্থন করেন বর্ষীয়ান অভিনেতার এই অভিমত? জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!
