জি বাংলার ধারাবাহিক জোয়ার ভাঁটা (Jowar Bhanta) শুরু হয়েছে কয়েক মাস আগেই। গল্পের কেন্দ্রে দুই বোন, উজি আর নিশা। দুই বোনের স্বপ্ন থেকে স্বভাব একেবারে ভিন্ন। উজি পড়াশোনা করে ভালো চাকরি পেতে চায় আর নিশা বড়লোকদের ঠকিয়ে তাঁদের পেপার স্বস্তি দিতে চায়। নিশার কথায়, এই বড়লোকদের জন্যই তার মা এবং দাদা মা’রা গিয়েছে। নিশা তাই সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে, মিথ্যে লোভ দেখিয়ে ফোন করে টাকা চুরি করে এবং সে এটাতে পটু। ঘটনাচক্রে তাদের বাবাও মা’রা যায় এবং এই মৃ’ত্যুর সঙ্গে নাম জড়িয়ে যায় ব্যবসায়ী ঋষি ব্যানার্জির।
শহরে এসে পরিচয় গোপন করে দুই বোন প্রতিশোধ নেওয়ার খেলায় নেমে পড়ে। কিন্তু ধারাবাহিকের গল্পে নিশার যেসব কার্যকলাপ এবং তার পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে, তাতে অপরাধ মানসিকতার বৃদ্ধি অনিবার্য বলেই মনে করছেন অনেকেই। কখনও স্ক্যাম কল করে টাকা লুট, কখনও গয়না লুট করতে ডাকাতি আবার পাসকোড চুরি করে ডিজিটাল লকার হ্যাক করা। এছাড়াও ছদ্মবেশ ধারণ করা, খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশানো এবং শ্লীলতাহানির মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলোও তুলে ধরা হচ্ছে!

আর সব থেকে আশ্চর্য বিষয়, তাদের কেউ ধরতেও পারছে না। পুলিশের যত বড়ই কর্মকর্তা হোক, সবার চোখে ধুলো দিয়ে দুই বোন অপরাধের পর অপরাধ করে যাচ্ছে। আরও একটি বিষয় অপরাধ মানসিকতা বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট বলে মনে করছেন দর্শকরা, সেটা হলো ঋষিকে অপহরণের সময় নিশার বারবার ফোনের সিমকার্ড বদলে ফেলা। বাংলা ধারাবাহিক বরাবর সমাজের বাস্তবতা এবং অন্ধকার দিক তুলে এনেছে ঠিকই। তবে সবকিছু একটা সীমার বাইরে চলে গেলে, তা ইতিবাচকের থেকে নেতিবাচক প্রভাব বেশি ফেলে।
আরও পড়ুনঃ ‘এই ধারাবাহিকের জন্যই বড় ওয়েব সিরিজ হাতছাড়া হয়েছে আমার…সুযোগ পেলাম না, কারণ এখানে সময় দিতে হলো!’ ধারাবাহিক ছাড়ার পর, প্রথমবার মুখ খুলে দিতিপ্রিয়ার বি’স্ফো’রক দাবি! এত বিতর্কের পর তিনি কী করছেন এখন?
এই ক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে বলে অনেকের মত। ধারাবাহিকের এই দিকগুলো নিয়ে বিতর্ক বাড়লেও অনেক দর্শকই মনে করছেন, গল্পকাররা চাইলে এখান থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা তুলে ধরতে পারতেন। কারণ বাস্তব জীবনে অপরাধ যত সহজে দেখানো হয়, তার পরিণতি ততটাই কঠিন ও দুঃসহ। কিন্তু ‘জোয়ার ভাঁটা’-তে দুই বোনের অপরাধের পর অপরাধ করেও বারবার রেহাই পাওয়াটাই যেন সমস্যার মূলে। এতে দর্শক, বিশেষ করে অল্প বয়সীরা ভুল বার্তা পেতে পারে যে কৌশল আর বুদ্ধি থাকলে অপরাধ করেও পার পাওয়া যায়।
অথচ সমাজে প্রতিশোধ কিংবা ন্যায় প্রতিষ্ঠা, কোনওটাই অপরাধের পথে হাঁটলে সম্ভব নয়। বাস্তবতার সঙ্গে নাটকীয়তার ভারসাম্য বজায় রাখাই যেখানে ছিল মূল চ্যালেঞ্জ, সেখানে অতিরিক্ত অন্ধকার আর নেগেটিভিটি গল্পকে বিশ্বাসযোগ্যতার সীমার বাইরে ঠেলে দিচ্ছে। তাই অনেকেই এখন আশা করছেন, আগামি পর্বগুলোতে গল্প এমন দিকে মোড় নেবে যেখানে এই অপরাধের জালে জড়িয়ে পড়ার মূল্য এবং পরিণতি স্পষ্টভাবে দেখানো হবে আর গল্প ফিরে আসবে তার সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায়।
