জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

‘অভিনয়ে মাঝামাঝি কিছু হয় না, দর্শক হয় ভালোবাসবে নয় প্রত্যাখ্যান করবে!’ বাস্তববোধ আর অধ্যাবসায়ের দর্শনেই বাজিমাত করছেন দ্রোণ মুখোপাধ্যায়! পরিণীতাতে ‘গোপাল’ হয়ে জিতে নিচ্ছেন দর্শকের মন! কেমন লাগে দ্রোণের অভিনয়?

জি বাংলার ‘কার কাছে কই মনের কথা’ ধারাবাহিকে একটা সময় প্রধান চরিত্র ‘পরাগ’ ছিল দর্শকদের চোখে দেখা পর্দার সবচেয়ে খারাপ স্বামী। বউয়ের কোনও অনুভূতি সে বোঝে না, উল্টে জোর খাটায়। বাস্তবে কিন্তু এই চরিত্রে অভিনয় করা ‘দ্রোণ মুখোপাধ্যায়’ (Dron Mukherjee) সম্পূর্ণ বিপরীত! তাঁর সমাজ মাধ্যমের পাতায় চোখ রাখলে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্তই চোখে পড়বে। ঠিক সেই চিত্রই তিনি ফুটিয়ে তুলছেন, বর্তমানে জি বাংলার ‘পরিণীতা’ (Parineeta) ধারাবাহিকে। সেখানে তার চরিত্র একদম ইতিবাচক, ন্যেরা-গোয়ালের সাদাসিদে স্কুল মাস্টার গোপালের চরিত্র।

গোপাল তার স্ত্রী রুক্মিণীকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ধারাবাহিকের পার্শ্বজুটি হলেও গোপাল এবং রুক্মিণীর রসায়ন দর্শকদের বিশেষ পছন্দ। একটা কথা অস্বীকার করলে চলবে না যে, যেই চরিত্রই হোক না কেন দ্রোণ মুখোপাধ্যায় কিন্তু প্রাণ এনে দেন তাতেই। সম্প্রতি এই ধারাবাহিকেরই প্রধান অভিনেতা উদয় প্রতাপ সিংহ, দ্রোণকে কিছু প্রশ্ন করেন। তার উত্তরে অভিনেতার পরিণত দৃষ্টিভঙ্গি সমাজ মাধ্যমে সবাইকে মুগ্ধ করেছে। উদয় প্রথমে দ্রোণকে জানতে চান, অভিনেতা হওয়ার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি তাঁর জীবনে?

হাসিমুখে দ্রোণ বলেন, “আমার মা-বাবা কোনদিনই চাপ দেয়নি যে অভিনেতা হওয়া যাবে না, অন্য কোন পেশা বাছতে হবে। বরং তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছেন। তবে, বাকি অভিভাবকদের মতো তাদেরও একটাই চিন্তা ছিল যে পড়াশোনা করার পর ছেলের যেন একটা স্থায়ী রোজগারের ব্যবস্থা হয়। এছাড়াও যে সমস্ত পরিচালক এবং প্রযোজক আমার উপর ভরসা করেছেন, তাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।” এরপর উদয় জানতে চান, দ্রোণ যে এতটা বাস্তবসম্মত চরিত্রে এতটা স্বাভাবিক অভিনয় করেন, সেটা দর্শকদের মনকে ছুঁয়ে যায়।

অন্যরা যেখানে সূক্ষ্ম দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে এতটাই একঘেয়ে করে ফেলেন যে দর্শকরা একাত্ম হতে পারে না। দ্রোণের এমন অভিনয়ের পেছনে কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে? দ্রোণ জানান, “এক তো দর্শকদের ভালো লাগবে বা লাগবে না, মাঝামাঝি কিছু হয় না। আর আমার মনে হয়, অন্য যেকোনও জিনিসের মতো অভিনয়েও একটা অধ্যাবসায় প্রয়োজন হয়। যে দৃশ্যে তুমি অভিনয় করছো, সেই দৃশ্যে একটা চাহিদা আর ছন্দ আছে। অভিনেতা যদি সেটা বুঝতে পারেন, তাহলেই নিজের থেকে দৃশ্যটা দর্শকদের মনকে ছোঁবে।

আর অভিনেতাকেও মানুষ পছন্দ করবে। ছোট থেকে ছোট ত্রুটিও দর্শকদের নজর এড়ায় না তারা ঠিক ধরে ফেলে, কাজেই অভিনেতার প্রশিক্ষণে যথেষ্ট প্রয়োজন আছে।” এরপর উদয় জানতে চান, যেহেতু অভিনয় পেশায় কোনও নির্বাসন নেই তাই দ্রোণ যখন নিজের থেকেই আর অভিনয় করবেন না, তিনি চান মানুষ কীভাবে তাকে মনে রাখবে? দ্রোণ বলেন, “একজন ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে আমাকে মনে রাখলেই হবে, যার সব চরিত্রই কমবেশি সফল।”

এরপর উদয় বলেন অভিনয় জগতে, বিশেষ করে ছোটপর্দার শিল্পীদের ক্ষেত্রে কোন জায়গাটা সবচেয়ে বেশি ব্যর্থতার? দ্রোণ বলেন, “ছোটপর্দায় টাইপকাস্ট হয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। কোন শিল্পী যখন একটা চরিত্রে অভিনয় করে বেশি দর্শককে আকৃষ্ট করতে পারছেন, ধরে নেওয়া হয় তিনি ওই ধরনের চরিত্রেই অভিনয়ের যোগ্য। এছাড়াও বড় পর্দা বা ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, ছোট পর্দার ক্ষেত্রে সেই চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে সাহস দেখাচ্ছেন না অনেকেই।”

সবশেষে উদয় জানতে চান, দ্রোণ অভিনয় জগতের কোন সেই বিশেষ ব্যক্তিত্বকে নিজের অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন। দ্রোণ জানান, “চিরকাল আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে আলাদা করে দেখেছি। সৌভাগ্যবশত ওনার সঙ্গে একটি ছবিতে পর্দা ভাগ করার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। ওনার মতো একসতাংশ হতে পারাটাও ভাগ্যের, পারব কিনা জানিনা।” এই দুই অভিনেতার কথপোকথনের ভিডিও সমাজ মাধ্যমে মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। আর দ্রোণ যে কথাগুলো বলেছেন, তার থেকেই স্পষ্ট যে অভিনেতা হিসেবে তিনি কতটা পরিণত!

Piya Chanda