লিওনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে যখন গোটা শহর আনন্দে মেতে উঠেছে, ঠিক তখনই সেই উচ্ছ্বাসের মাঝেই কালো ছায়া ফেলেছিল যুবভারতীতে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই সমাজমাধ্যমে আরও একটি লজ্জাজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়। আর্জেন্টিনার ফুটবল মহাতারকার পাশে দাঁড়িয়ে তোলা একটি ছবি ঘিরে আচমকাই কুৎসিত আক্রমণের মুখে পড়েন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। মুহূর্তের মধ্যে সমাজমাধ্যমে ভেসে আসে অশালীন মন্তব্য, কটাক্ষ আর ব্যক্তিগত আক্রমণ, যা একজন শিল্পীর পাশাপাশি একজন নারীর সম্মানকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।
এই পরিস্থিতিতে প্রথম থেকেই স্ত্রীর পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান অভিনেতা ও বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী। সমাজমাধ্যমে তিনি স্পষ্ট ভাষায় প্রতিবাদ জানান এবং জানান যে এ ধরনের কুরুচিকর আচরণ কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে তাঁর প্রতিবাদ সত্ত্বেও আক্রমণ থামেনি, বরং মন্তব্য আরও বিষাক্ত ও ব্যক্তিগত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত গত চৌদ্দ ডিসেম্বর রাতে টিটাগড় থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন রাজ চক্রবর্তী। অভিযোগ পাওয়ার পরই সক্রিয় হয় পুলিশ এবং দ্রুত তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তে উঠে আসে অভিযুক্তের পরিচয়। জানা যায় তার নাম বিট্টু শ্রীবাস্তব, যদিও কোথাও কোথাও কমলেশ শ্রীবাস্তব নামেও তার উল্লেখ রয়েছে। টিটাগড়ের বাসিন্দা হলেও সে বর্তমানে বিহারের আরা জেলায় থাকত। অভিযোগ দায়েরের মাত্র পনেরো দিনের মধ্যেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। শনিবার আরা থেকে তাকে পাকড়াও করা হয় এবং ট্রানজিট রিমান্ডে সোমবার টিটাগড়ে আনা হয়। পরে বারাকপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাকে দুদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশি হেফাজতে দফায় দফায় জেরা চলছে অভিযুক্তের। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন এটি তার একক কাজ নাকি এর পিছনে আরও কেউ যুক্ত রয়েছে। জেরায় উঠে এসেছে আরও বিস্ফোরক তথ্য। অভিযোগ রয়েছে যে অভিযুক্ত বিহারে বসেই শুধু শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় নয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধেও কুরুচিকর মন্তব্য করেছে সমাজমাধ্যমে।
আরও পড়ুনঃ জোয়ার ভাঁটা ধারাবাহিকে শ্রুতির দৌড় নিয়ে কটা’ক্ষ, ওজন নয়, যন্ত্র’ণার গল্প বলল শ্রুতির দৌড়, ট্রোলারদের মুখ বন্ধ করলেন অভিনেত্রী
এই প্রসঙ্গে রাজ চক্রবর্তীর বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তাঁর কথায়, প্রকাশ্যে মহিলাদের অপমান করা কোনও সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং তিনি এর শেষ দেখে তবেই শান্ত হবেন। পাশাপাশি তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই ঘটনার পিছনে কোনও পরিকল্পিত ইন্ধন থাকতে পারে। এমনকি রাজনৈতিক যোগসূত্রের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি। তাঁর মন্তব্য, অভিযুক্তের পাশে যদি কোনও রাজনৈতিক দল দাঁড়ায়, তবে তা মহিলাদের সম্মান নিয়ে তাদের অবস্থানকেই প্রশ্নের মুখে ফেলবে।
