বাংলা সিনেমার ইতিহাসের (History of Bengali Cinema) নক্ষত্র। যারা সিনেমা বোঝেন ‘সত্যজিৎ রায়’ (Satyajit Ray) নামটি শুনলেই তাদের মাথা এমনিতেই নত হয়। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা শুধু বাংলা নয়,ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে আলাদা করে উল্লেখের দাবি রাখে। কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে বাংলা সিনেমা পরিচিতি বিশ্ব দরবারে। পেশা বদলের তাগিদে এক নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছিল ভারতীয় সিনেমার জন্য। সত্যজিৎ রায় একাধারে ছিলেন চিত্রশিল্পী, পরিচালক আবার সাহিত্যিক! ছবি আঁকা, সিনেমা বানানো, গান লেখা, তাঁর হাতের লেখনী সবেতেই ছিল তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য।
কিংবদন্তী এই ব্যক্তিত্বের হাত ধরেই ১৯৯২ সালে ভারতে আসে অস্কার। ভারতের মুকুটে যোগ হয়েছিল নয়া পালক। একবার সাক্ষাৎকারে কিংবদন্তী জানিয়েছিলেন, অপু ট্রিলজি-র প্রথম সিনেমা ‘পথের পাঁচালি’। সিনেমার পুরোটা না দেখেই হল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন দর্শকরা। খোদ মার্কিন মুলুকে ঘটে এমন কাণ্ড।
আজকের দিনেও ভারতবর্ষের বহু বিখ্যাত আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাতারা সিনেমা তৈরির জন্য সত্যজিৎ শৈলীর অনুসরণ করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা কার্স্টিন অ্যান্ডারসনের নেওয়া একটি চলচ্চিত্রনির্ভর সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায় জানিয়েছিলেন, ‘আমাকে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের সংমিশ্রণ বলতে পারেন।’ উল্লেখ্য, সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় যেমন ভারতীয় সংস্কৃতি ধরা দিয়েছে, ধরা দিয়েছে দারিদ্র্য, ঠিক একই ভাবে ধরা দিয়েছে ইউরোপীয় সভ্যতা।
কিংবদন্তী মতে, ইউরোপিয়ান শিল্প এবং সাহিত্য নিয়ে অনেক লেখাপড়া করেছেন তিনি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপ সম্পর্কে ইউরোপিয়ানদের চেয়েও বেশি জানার দাবি করেছেন সত্যজিৎ রায়। আর তা সম্ভব হয়েছে উপনিবেশবাদের জন্য। বরাবরই নিজের দেশের মানুষকে জানার ইচ্ছা ছিল। তাদের নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে তিনি বুঝেছিলেন ভারতীয়রা অন্যান্য সব দেশের, অন্যান্য জাতির তুলনায় অনেকটা বেশি। ভারতীয়দের মধ্যে আছে প্রবল জানার আগ্রহ।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আম আটির ভেঁপু’ সিনেমারূপ ‘পথের পাঁচালি’ বিশ্বজোড়া পরিচিতি দিয়েছিল সত্যজিৎ রায়কে। আজও গোটা বিশ্ব জুড়ে সিনেমাটি ঘিরে রয়েছে উত্তেজনা, উন্মাদনা। তবে জানেন কি এই সিনেমা ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু বিস্ময়কর ঘটনা। আগেই বলেছি, ‘পথের পাঁচালি’ দেখতে এসে আমেরিকার একটি প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অর্ধেকের বেশি দর্শক। কারণ মানুষ যে হাত দিয়েও ভাত খেতে পারে বিষয়টি সাহেব সুবোদের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর মনে হয়। তবে মার্কিন মুলুকেও এমন বহু মানুষ আছেন যারা বাংলা ভাষা শিখতে চা্ন। ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চান।
আরো পড়ুন: মেঘের সন্তানকে পৃথিবীর আলোর দেখতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা ময়ূরীর! পরিকল্পনা জেনে গেল লাল! কী হবে এবার?
এ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, “প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মিলন এখনও সম্পূর্ণভাবে ঘটেনি। হয়ত সম্ভবও নয়।” তবে খানিক আদান-প্রদান হয় বৈকি। তাঁর বক্তব্য, ভাবনা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আদান-প্রদান করে। প্রাচ্যের উপর পাশ্চাত্য ভাল প্রভাব ফেলেছে। সেই কবে পরিচালক একথা বলে গিয়েছেন। তাঁর বলে যাওয়া এই কথা বর্তমানে ১০০ শতাংশ সত্য হয়েছে বলা বাহুল্য!