জয়েন গ্রুপ

বাংলা সিরিয়াল

এই মুহূর্তে

“মনে হচ্ছিল, আগামী দশ মিনিটের মধ্যে ম’রে যাব” হঠাৎ ভয়ংকর মুহূর্তের সাক্ষী অভিষেক বীর শর্মা! কী এমন ঘটেছিল যে জীবন-মৃ’ত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন অভিনেতা?

বাংলার টেলিভিশনের দর্শকদের কাছে আজ ‘অভিষেক বীর শর্মা’ (Abhishek Veer Sharma) জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে একেবারেই পরিচিত মুখ। প্রতিটি ধারাবাহিকে তাঁর সাবলীল অভিনয়, সংলাপে স্বচ্ছন্দতা আর চরিত্রে ঢুকে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছে। পর্দায় তাঁকে দেখে অনেকেই ভাবেন তিনি জন্মসূত্রে বাঙালি, অথচ বাস্তবটা ঠিক উল্টো! অভিষেকের জন্মস্থান কিন্তু বিহার। বাংলা ভাষা তাঁর মাতৃভাষা নয়, তবুও নিজের পরিশ্রম আর আত্মস্থ করার ক্ষমতা দিয়ে তিনি নিজেকে বাংলার ঘরের ছেলে করে তুলেছেন আর এই পথটা মোটেই সহজ ছিল না।

ছোটবেলা থেকেই অভিষেক খেলাধুলা আর পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন। বন্ধুমহলে তাঁর চলাফেরা, পোশাক-আশাক কিংবা নিজেকে উপস্থাপনের ভঙ্গি আলাদা করে নজর কাড়ত। বন্ধুরা মজা করে বলত যে একদিন সে নায়ক হবেই। কিন্তু পরিবারের স্বপ্ন ছিল অন্য জায়গায়। বাবা-মা চাইতেন, ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই স্কুল শেষ করে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসা, পাটনায় পড়তে যাওয়া। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হিসেবে সেখানে জীবন ছিল বেশ কঠিন।

পকেটে হাতখরচ ছাড়া বিশেষ কিছু থাকত না, অনেক সময় একাকীত্বই সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। কোনও উৎসবে যখন সবাই বাড়ি ফিরে যেতে, টাকার অভাবে টিকিট কিনতে না পেরে তিনি একাই থেকে যেতেন হোস্টেলে। পড়াশোনার ফাঁকেই অভিনয়ের প্রতি টানটা ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দেয় তাঁর। বাড়ি ফিরে স্থানীয় ভাষার একটি ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। ঠিক সেই সময়েই বিহারী অভিনেতা প্রয়াত সুশান্ত সিং রাজপুতের সাফল্য অভিষেককে গভীরভাবে নাড়া দেয়। বিহার থেকে উঠে এসে কেউ যদি জাতীয় স্তরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, তাহলে তিনিও পারবেন!

এই বিশ্বাস থেকেই মুম্বাইয়ের পথে পা বাড়ান। কিন্তু স্বপ্নের শহর তাঁকে স্বাগত জানাল লড়াই দিয়ে! কখনও নিয়মিত খাওয়া জুটত না, একদিন খেতে পেলে তো তিনদিন না খেয়ে কাটাতেন। মায়ানগরীর বাড়ি ভাড়ার টাকাই হয়ে উঠত মাথাব্যথা। বাড়িতে ফোন করে বাবা-মাকে আশ্বস্ত করতে হলেও, বাস্তবটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। এই লড়াইয়ের মাঝেই এক রাতে তাঁর শরীর ভেঙে পড়ে। প্রবল অস্বস্তি, বুক ধড়ফড় থেকে প্যানিক অ্যাটাকের অভিজ্ঞতা তাঁকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেয়!

এক বৃষ্টিমুখর রাতে, তিনি শুয়ে ভাবছিলেন কিভাবে বাবা-মাকে গর্ববোধ করাবেন? হঠাৎ, শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। অসম্ভব কষ্ট হতে শুরু করে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে থাকে। অভিষেকের কথায়, “মনে হচ্ছিল ১০ মিনিটের মধ্যেই মারা যাবো। সামনেই একটা ক্লিনিক ছিল, যেখানে ভিজে ভিজে গেলাম। আমায় ভর্তি হয়ে যেতে বলে, কিন্তু টাকার অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি।” তিনি আর দেরি না করে কোকিলাবেন নার্সিংহোমে যান, সেখানে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে কিছুটা সুস্থ অনুভব করলে বাড়ি ফিরে আসেন।

অভিষেকের কথায়, “তারপরেও সেই প্যানিক অ্যাটাক মাঝে মাঝেই আসতো। পুরোপুরি সুস্থ হতে আমার ছয় মাসের বেশি সময় লাগেছে।” এই সময়টা তাঁকে বুঝিয়ে দেয়, মানসিক শক্তি না থাকলে শুধু স্বপ্ন দিয়ে টিকে থাকা যায় না। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। শেষমেশ অভিনয়ের টানেই কলকাতায় আসা। এখান থেকেই তাঁর জীবনের গতি বদলাতে শুরু করে। আজ জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘জোয়ার ভাটা’তে ঋষির চরিত্রে তাঁকে দর্শক দেখছেন নিয়মিত। ধারাবাহিকটি টিআরপি তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে আর সেই সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভিষেকের দীর্ঘ লড়াইয়ের গল্প।

Piya Chanda