দুর্গাপুরের এক সাধারণ পরিবারের মেয়ে এবং পড়ুয়া থেকে আজ বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ‘ঈশানী চ্যাটার্জী’ (Ishani Chatterjee)। অভিনেত্রীর এই যাত্রাটা ঠিক যেন ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়ার গল্প, কোনও বাড়তি সমর্থন নেই বরং আছে অনেকখানি প্রশংসায় এবং সমালোচনা। মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনার ফাঁকে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত, কিন্তু সেই সুযোগকে তিনি যেভাবে কাজে লাগিয়েছেন, তা সহজ ছিল না। ছোটবেলার ইচ্ছেটাকে আঁকড়ে ধরেই তিনি অডিশনে এসেছিলেন।
তখন কেউ হয়তো ভাবেনি, এই নবাগতা মেয়েটিই অচিরেই ‘পরিণীতা’র পারুল হয়ে দর্শকের ঘরের মানুষ হয়ে উঠবেন! পর্দায় পারুল চরিত্রটাকে ঈশানী এমনভাবে গড়ে তুলেছেন যে, চরিত্র আর অভিনেত্রীর সীমারেখা অনেক সময়ই মুছে যায়। রাস্তায় বেরোলে মানুষ তাঁকে পারুল বলেই ডাকে, ভালোবাসা জানায়। এই স্বীকৃতিটা আসলে তাঁর অভিনয়েরই ফল। একেবারে সহজ, মাটির কাছাকাছি থেকেও দৃঢ় মানসিকতার এক তরুণীর চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা মোটেও সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে আঞ্চলিক ভাষার টান, সংলাপের ভঙ্গি,
মিলিয়ে পারুল যেন কাগজের চরিত্র হয়ে না থেকে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এই ধারাবাহিকের আরও বড় শক্তি পারুল-রায়ান জুটি। উদয় প্রতাপ সিংয়ের সঙ্গে ঈশানীর অনস্ক্রিন রসায়ন দর্শকদের আলাদা করে টেনেছে। ঝগড়া, অভিমান আবার একে অপরের ওপর নির্ভরতা মিলিয়ে এই সম্পর্কটাকে দর্শক ‘টক-ঝাল-মিষ্টি’ বলে থাকেন। গল্পে যতই টানাপোড়েন থাকুক, দু’জনের অভিনয়ের স্বাভাবিকতা সেই দৃশ্যগুলোকে উপভোগ্য করে তোলে। তাই ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা মাঝেমধ্যে কমলেও, আবার ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
প্রসঙ্গত, শুরুর দিকে ঈশানীকে নিয়ে যে সমালোচনা বা ট্রলিং হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। নিজের কাজ দিয়েই তিনি দেখিয়েছেন যে নবাগত হলেই দক্ষতার অভাব থাকে, এই ধারণা ভুল! টিআরপি তালিকায় বারবার শীর্ষে বা প্রথম পাঁচে থাকা শুধু গল্পের কৃতিত্ব নয়, মুখ্য চরিত্রের অভিনয়ও সেখানে বড় ভূমিকা নিয়েছে। একসময় ‘মিঠাই’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকের সঙ্গে তুলনা টানা হলেও, ‘পরিণীতা’ নিজের মতো করে আলাদা জায়গা তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনঃ প্রেম কি তবে জমে ক্ষীর ?আরাত্রিকার জন্মদিনে বিশেষ উপহার অভিষেকের! ‘তুমি আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তুমি জানো’ বার্তা নায়িকার
এই সাফল্যের স্বীকৃতিও এসেছে নানা পুরস্কারের মাধ্যমে। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড হোক বা টিভি নাইন বাংলার সেরা অভিনেত্রীর সম্মান, সবই তাঁর ঝুলিতে জমা পড়েছে ধীরে ধীরে। তবে পুরস্কারের থেকেও বড় প্রাপ্তি সম্ভবত দর্শকের বিশ্বাস। পারুলের মতো শক্ত, আত্মসম্মানবোধে ভরপুর চরিত্রকে মনে গেঁথে দেওয়াটাই প্রমাণ করে যে অভিনেত্রী হিসেবে ঈশানী কতটা পরিণত। এই কারণেই পারুল আজ শুধু একটি ধারাবাহিকের চরিত্র নয়, বাংলা টেলিভিশনের স্মরণীয় নামগুলোর একটিও বটে।
