জি বাংলার (Zee Bangla) নতুন মুখ নির্বাচন নিয়ে দর্শকদের প্রথমে যে দ্বিধা কাজ করে, তা প্রায় সময়েই সমাজ মাধ্যমে ট্রোলের বন্যা বইয়ে দেয়। নতুন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অচেনা মুখ দেখলেই অনেকেই শুরুতে সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই কি অভিনয় করতে পারবে? কিন্তু আশ্চর্যভাবে, সময় গড়াতেই সেই সংশয়ই প্রশংসায় বদলে যায়! চ্যানেলটি যেভাবে নবাগতদের তুলে ধরে বরাবর, তাতেই বোঝা যায়, তাদের চোখে থাকে আলাদা এক আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসই পরে প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন একসময় ট্রোলের শিকার হওয়া অভিনেত্রীদের অভিনয়ই দর্শককে গল্পে বেঁধে রাখে।
এই ধারাবাহিক যাত্রার সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ অভিনেত্রী আরাত্রিকা মাইতি। ‘খেলনাবাড়ি’র প্রথম প্রোমো বেরোতেই সমাজ মাধ্যমে নানান মন্তব্যের ঝড় উঠেছিল। কেউ বলেছিল, ‘অভিনয়ের অভাব স্পষ্ট!’ কেউ বা আবার লুক নিয়েও খোঁচা দিয়েছিল! অথচ ধারাবাহিক শুরু হতে না হতেই বদলে গেল সেই সুর। চরিত্রে তার স্বাভাবিক অভিনয় আর পরের কাজ ‘মিঠিঝোরা’-য় অভিনয় মিলিয়ে তিনি নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন। দর্শকের চোখও শেষে বুঝেছে যে মিতুল বা রাইপূর্ণাকে অন্য কেউ এভাবে বাঁচিয়ে তুলতে পারত না।
একইভাবে অভিনেত্রী শ্রুতি দাসও আজ জনপ্রিয় মুখ। ‘ত্রিনয়নী’তে প্রথম দেখা যেতেই তাকে নিয়ে অকারণ সমালোচনা শুরু হয়, শুধু গায়ের রং একটু চাপা বলেই! অথচ এই রঙ, আবেগে আবদ্ধ দৃষ্টি টিকতে পারেনি তার অভিনয়ের সামনে। ত্রিনয়নীর সাফল্যই ছিল তার উত্তরের জায়গা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রুতি হয়ে উঠেছেন এমন এক মুখ, যাকে ছাড়া অনেকেই সেই চরিত্রের আবেগই কল্পনা করতে পারেন না। এখন তো ‘জোয়ার ভাঁটা’তে সহ-অভিনেত্রী আরাত্রিকার থেকেও শ্রুতিকে ঘিরে দর্শকদের উচ্ছ্বাস বেশি, যা দর্শকদের প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট।
নতুন অভিনেত্রী ‘ঈশানি চ্যাটার্জী’র ক্ষেত্রেও দৃশ্যটা খুব আলাদা ছিল না। ‘মিঠাই’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকের জায়গায় ‘পরিণীতা’ শুরু হওয়াটাই ছিল প্রথম বিতর্কের কারণ। ফলে পারুল চরিত্রে তাকে দেখার আগেই একদল দর্শক বিরূপ মনোভাব তৈরি করে ফেলেছিল। কিন্তু পরিণীতা ধীরে ধীরে নিজেদের জায়গা বানিয়ে নিতে শুরু করলে সেই সমালোচনাও থেমে যায়। এখন টিআরপির সাপ্তাহিক তালিকায় ধারাবাহিকটি নিয়মিতভাবে প্রথম পাঁচে থাকে। ঈশানির পারুল হয়ে ওঠাটাই যেন শেষ পর্যন্ত সবার ভুল ধারণা কাটিয়ে দিয়েছেন, ভালো অভিনয় নিজস্ব শক্তিতেই জায়গা দখল করে নিয়েছে সে।
আরও পড়ুনঃ “কলকাতায় টাকা রোজগার করতে চাইলে বিরিয়ানির দোকান খোলা ছাড়া উপায় নেই, একমাত্র ওটাতেই টাকা”—অকপট অভিনেতা প্রান্তিক ব্যানার্জি
সব মিলিয়ে এটাই স্পষ্ট যে প্রথমদিকে যতই সংশয় বা উপহাস থাকুক, জি বাংলা যে অভিনেত্রীদের বেছে নেয়, তাদের বেশিরভাগই সময়ের সঙ্গে প্রমাণ করে দেয় যে তারা ঠিকই সেরাদের তালিকায় থাকার যোগ্য! আরাত্রিকা, শ্রুতি বা ঈশানির পথটা আলাদা হলেও গন্তব্য এক, দর্শকের আস্থা পাওয়া। এই তিনজনই দেখিয়ে দিয়েছেন, নতুন মুখ মানেই খারাপ অভিনয় নয়। সুযোগ পেলে তারা দর্শকের মন জয় করতেই পারে। বরং ট্রোলের সেই পথ পেরিয়েই হয়তো আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে তাদের যাত্রা।
