জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘পরিণীতা’ (Parineeta) বর্তমানে এমন এক গল্পের মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নারীর সাফল্য ও স্বাধীনতার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে নারীই! নেড়া গোয়াল গ্রামের বউ রুক্মিণী শাড়ির ব্যবসা শুরু করে, গ্রামের অন্যান্য মেয়ে-বউদের পাশে দাঁড়াতে চাইছে। তার লক্ষ্য ছিল গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা। কিন্তু সাফল্যের সেই আলো দেখতে না চেয়ে, পরিবারেরই মেয়েরা তার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। সমাজের চেনা বাস্তবতায় যেমন অনেক সময় নারীই নারীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে, ধারাবাহিকের সাম্প্রতিক পর্ব সেই মনস্তত্ত্বকেই তুলে ধরেছে সূক্ষ্মভাবে।
রুক্মিণীর ব্যবসার উন্নতির জন্য বাইরে থেকে বিনিয়োগকারীরা আসবে— এই খবর পেতেই নতুন পরিকল্পনা হয়। তাদের হাতে তৈরি শাড়ি প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজন মডেলদের। শহর থেকে রুক্মিণীর ভাই রায়ান ও তার স্ত্রী পারুল এসে প্রস্তাব দেয়, গ্রামের মেয়েরাই মডেল হবে। সেই ভাবনাকে ঘিরে শুরু হয় প্রস্তুতি, উৎসাহে ভরে ওঠে গোটা গ্রাম। কিন্তু রুক্মিণীর ননদ, কাকি-শাশুড়ি এই অগ্রগতির ছবি কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁর চোখে এটা গ্রামের নারীদের ‘লজ্জা’ বিক্রির সমান। সেই ভুল ধারণা নিয়েই তিনি গ্রামের মোড়লের কাছে অভিযোগ করতে যান— যেন নারীর সম্মান মানেই ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে থাকা।

এরপরেই আসে ধারাবাহিকের অন্যতম শক্তিশালী দৃশ্য। গ্রামের লোকজন যখন মেয়েদের র্যাম্পে হাঁটা নিয়ে আপত্তি জানায়, তখন পারুলের জবাব যেন সমাজের পুরনো ধারণার মুখে এক তীব্র প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। সে দৃঢ় কণ্ঠে বলে, “চোখ খুলে দেখুন, নারীর সম্মান লুকিয়ে রাখলে নয়, তুলে ধরলেই প্রকৃত মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।” এই সংলাপ কেবল গল্পের নয়, বাস্তব সমাজেও এক গভীর বার্তা দেয়। নারী মানেই লজ্জা বা বাধা নয়, সে নিজের কৃতিত্বে গর্বিত হতে পারে— এই ভাবনাই যেন দর্শকদের মনে দাগ কেটে গিয়েছে।
পারুলের পাশে দাঁড়িয়ে রায়ানের সংলাপও সমান প্রভাব ফেলেছে দর্শকদের মনে। সে বলে ওঠে, “আমিও নেড়া গোয়ালের জামাই, আমার দিদি, বউ র্যাম্প হাঁটবে আর আমি দাঁড়িয়ে হাততালি দেব, দেখি কে আটকায়!” এই কথাগুলো এক আধুনিক পুরুষের মানসিকতার প্রতিফলন, যেখানে ভালোবাসা মানে নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং পাশে থেকে সমর্থন করা। রায়ানের এই মনোভাব গল্পে যেমন নতুন দিশা দেয়, তেমনই বাস্তব সমাজেও নারী-পুরুষের সম্পর্কের ভারসাম্যের এক সুন্দর দৃষ্টান্ত তৈরি করে। তবে গল্প এখানেই থেমে নেই।
আরও পড়ুনঃ নরম মেয়েটাই আজ সবাইকে দিল যোগ্য জবাব! আগের উজি নয়, সে যেন এক নতুন নারী! যাকে সবাই ‘ন্যাকা’ বলেছিল, আজ সেই ‘আরাত্রিকা’ একাই কাঁপিয়ে দিল ! উজির দৃঢ় পদক্ষেপে, ‘জোয়ার ভাঁটা’-র শুরু প্রতিশোধের নতুন অধ্যায়!
সাম্প্রতিক পর্বে দেখা যাচ্ছে রানু ও পুষ্পর সংঘাত তীব্র আকার নিচ্ছে। সমাজের উন্নতির পথে যে স্বার্থের রাজনীতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়, পুষ্প যেন তারই প্রতীক হয়ে উঠছে। ‘পরিণীতা’ এখন কেবল এক পারিবারিক গল্প নয়, বরং সমাজের আয়না। এখানে প্রতিটি চরিত্র সমাজের একেকটি বাস্তব রূপকে তুলে ধরছে। যেখানে নারী হয়ে নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা, অন্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ন্যায়কে দমন করা— এই পুরনো প্রথাগুলোকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে গল্পের সংলাপ, ঘটনাপ্রবাহ ও দৃশ্যমান প্রতীক। আর এই কারণেই ধারাবাহিকটি দর্শকের মনে ছুঁয়ে যাচ্ছে অন্য এক গভীর বাস্তবতায়—যেখানে স্বাধীনতার আসল লড়াই শুরু হয় নারীর ভেতর থেকেই।
