বাংলা টেলিভিশনের তরুণ অভিনেত্রীদের মধ্যে বর্তমানে যাঁর নাম সবচেয়ে আলোচিত, তিনি নিঃসন্দেহে ‘আরাত্রিকা মাইতি’ (Aratrika Maity)। বয়সে ছোট হলেও, অভিনয়ের জগতে তাঁর যাত্রা যেন একেবারে দৃঢ় পদক্ষেপে শুরু হয়েছে। বর্তমানে তিনি অভিনয় করছেন জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘জোয়ার ভাঁটা’-তে (Jowar Bhanta), যেখানে তিনি উজি চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন জয় করছেন। গল্পের শুরুতে যেমন নরম-স্বভাব, দ্বিধাগ্রস্ত এক মেয়ের জীবন দেখা যায়, তেমনই নতুন পর্বে তাঁর চরিত্রে দেখা গেল এক অন্য রূপ!
যাকে দেখে দর্শকরা বলছেন, “উজির ভেতরেও আগুন আছে!” এই ধারাবাহিকের গল্প ঘুরছে দুই বোন নিশা আর উজিকে কেন্দ্র করে। বাবার মৃ’ত্যুদিনেই নিশার জীবনে নেমে আসে এক বিশাল আঘাত, আর সেই ক্ষোভে সে শপথ নেয় ব্যবসায়ী ঋষি ব্যানার্জির উপর প্রতিশোধ নেওয়ার। অন্যদিকে উজি, যার কাছে বাবার শেখানো আদর্শই শেষ কথা। যে দিদির প্রতি নিবেদিত হলেও, মনের দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সে নরম, সৎ আর সংবেদনশীল— এমন একজন, যে অন্যের কষ্টে নিজেই ব্যথা পায়।

নিশার প্রতিশোধের পথে এগোনোর সময়, উজির ভেতরকার এই টানাপোড়েনটাই গল্পকে আরও মানবিক করে তোলে। নিশা যখন ছদ্মবেশে নিজের লক্ষ্যপূরণের জন্য এগিয়ে যায়, তখন উজি দ্বিধায় পড়ে যায়— কীভাবে কারও জীবনের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ রক্ষা করা যায়? কিন্তু পরিস্থিতি এমনভাবে ঘুরে দাঁড়ায় যে, শেষ পর্যন্ত উজিরই বিয়ে হয় সেই ঋষির সঙ্গে, যাকে তারা একসময় শত্রু ভাবত। এখান থেকেই শুরু নতুন অধ্যায়— যেখানে উজি নিজের ভেতরের ভয়, অস্থিরতা আর অপরাধবোধকে পেছনে ফেলে নতুন দায়িত্ব নেয় পরিবারের প্রতি।
নতুন পর্বে সেই রূপান্তরের মুহূর্তটাই যেন পুরো ধারাবাহিকের প্রাণ হয়ে উঠেছে। ধারাবাহিকের নতুন পর্বে যখন নিশা নিখোঁজ হয়ে যায় বিয়ের আগেই, শেষ পর্যন্ত আর ফেরে না। প্রথমে উজি ভেবেছিল যে দিদি ঠকিয়েছে, কিন্তু পরে সে বুঝতে পারে দিদি কোনও বিপদে পরেই আসতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে ঋষির বাড়ির কয়েকজন নিশাকে সন্দেহ করছে গয়না চুরির ঘটনায়। দিদির অনুপস্থিতিতে আজ তাই উজি নিজের ভয়কে দমিয়ে এক অন্য রূপ নিল। দৃঢ় কন্ঠে সে সবার সামনে দাঁড়িয়ে সে সবাইকে যোগ্য জবাব দিল।
আরও পড়ুনঃ “আমার মনে হচ্ছে দু’জনে বাচ্চা হয়ে গেছি, আমাদের চুলের দৈর্ঘ্যও এখন সমান সমান!”— কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেবলীনার প্রশংসায় ভাসলেন সৌম্য! বন্ধুর কথায় লজ্জায় রাঙা দেবলীনা, বাড়ছে প্রেমের গুঞ্জন!
আরাত্রিকা মাইতির অভিনয় আজ প্রমাণ করে দিয়েছে, শুধু সংলাপ বা নাটকীয়তা নয়— চোখের এক্সপ্রেশন, নীরবতা আর মাপা সংযমের মধ্যেও যে কত গভীর অনুভূতি লুকিয়ে থাকতে পারে। প্রতিটা দৃশ্যে তাঁর সংবেদনশীল অভিব্যক্তি, কথার গতি আর আবেগের ভারসাম্য এমনভাবে ফুটে উঠেছে যে, দর্শকরা বলছেন, “আজ উজি একাই কাঁপিয়ে দিয়েছে পর্দা।” “অনেকদিন পর এমন পারফরম্যান্স দেখা গেল, যেখানে চরিত্রের বিকাশ সত্যিই বাস্তব মনে হয়েছে।”
উজি চরিত্রটা আজ যেন প্রতীক— এমন একজন মানুষের, যিনি চুপচাপ থেকেও নিজের লড়াই চালিয়ে যান, ভেতরে জমে থাকা ঝড়টাকে মুখে না এনে কাজে প্রমাণ করেন। ধারাবাহিকের এই নতুন পর্ব যেন হয়ে উঠল উজির আত্মপ্রকাশের মুহূর্ত। যারা এতদিন তাঁকে ভুল বুঝেছিলেন, তাঁদের মনে এখন একটাই অনুভব— নরম মানুষ মানেই দুর্বল নয়। কখনও কখনও, সবচেয়ে নীরব মানুষটিই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে জোরে আওয়াজ তোলে— সংলাপে নয়, নিজের কাজে।
