বর্তমানে বাংলার স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী তিনি। তার সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে মাতোয়ারা বাংলা সহ সারা ভারত। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে দুঃখের গান, বাউল থেকে রক সঙ্গীত, তার গান বারংবার মন জয় করেছে দর্শকদের। কখনও তার গান শুনে চোখ দিয়ে ঝরেছে অঝোর ধারায় জল আবার কখনও তার গান শুনে নেচে উঠেছে সকলে। প্রাক্তনের তুমি যাকে ভালোবাসো হোক বা অর্ধাঙ্গিনীর আলাদা আলাদা, তিনি মঞ্চে উঠলেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায় দর্শকরা সকলে। তিনিই স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী (Imon Chakroborty)।
ইউটিউব ভিডিও থেকে ক্যারিয়ারের প্রথমেই প্লেব্যাক গানের সুযোগ। প্রথম গানেই পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। তবে জীবন যুদ্ধটা মোটেও খুব বেশি সহজ ছিল না তার কাছে। মানসিক চাপ, যন্ত্রণাকে একাই বয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। তবু হার মানেননি। চালিয়ে গেছে লড়াই। কলকাতার থেকে কিছুটা দূরে লিলুয়ার বাসিন্দা তিনি। মা বাবা দুজনেই ছিলেন কর্মরত। ফলে জীবনে যেমন সাংঘাতিক আর্থিক অনটন দেখেননি তেমনই দেখেননি প্রাচুর্যও। ছোটবেলা থেকেই তার টান ছিল গানের প্রতি। তবে গানের শেখার যাত্রাটাও খুব একটা সহজ ছিলনা তার জন্য।
বাবা মায়ের হাত ধরেই ইমন পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়
মেয়েকে গান শিখানোর জন্য বাবা মা তাকে নিয়ে যেতেন কলকাতায়। ইমনের কথায়, “আমি ট্রেনে গিয়ে ফুলবাবু হয়ে বসতাম, এটা ওটা প্রচুর বায়না ছিল আমার, খেতাম কিন্তু আমাকে বসানোর জন্য সারা রাস্তা যে আমার বাবা মা দাড়িয়ে রয়েছেন সেটা আমি বুঝিনি।” ছোট থেকেই সাহিত্য, ইতিহাসের প্রতি খুব টান ছিল ইমনের। তাই সেই বইগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয়গুলো বরাবর এড়িয়ে যেতেন তিনি। সংগীতশিল্পীর মতে “আমি কখনও অঙ্কে ভালো ছিলাম না। জীবনেরও অঙ্কেও না।”
শুনতে হয়েছে পাড়ার লোকের কুমন্তব্য, মায়ের মৃত্যুর পর ডি’প্রেশনের শি’কার হয়েছেন ইমন চক্রবর্তী
গানের অনুশীলন করার জন্য পাড়ার লোকেদের থেকে শুনতে হয়েছে “মাইয়া এত কি করে মাইয়া কি বড় হইয়া লতা মঙ্গেশকর হইবো নাকি যে সারাদিন হ্যাঁ হ্যাঁ করে গান করে।” কিন্তু সমস্ত মন্তব্য থেকে তাকে বটবৃক্ষের মতো রক্ষা করেছেন তার মা। সবটাই বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একটি ঝড়ে আঁচড়ে পড়ে তার জীবনে। ২০১৪ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন তার মা। মা চলে যাওয়ার পর এক নিমিষেই পাল্টে গেল তার জীবন। জীবন থেকে চলে গেল তার কাছের বন্ধু বান্ধব, প্রেমিক। মায়ের চলে যাওয়ার পর থেকেই তাকে গ্রাস করতে শুরু করল ডিপ্রেশন।
আরো পড়ুন: সার্থকের চরিত্র সবার ভালো লাগছে এটাই বড় প্রাপ্তি! জীবনের গল্প ভাগ করলেন মৈনাক ঢোল!
রোজ রাত্রে সুই’সাইড নোট লিখতেন ইমন চক্রবর্তী
“রোজ রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার সময় ঈশ্বরে কাছে প্রার্থনা করতাম যেন কাল সকালটা দেখতে না হয়। বাবা অফিসে চলে যাওয়ার পর আমার একটা ডাইরি আছে সেখানে নিয়মিত, প্রতিদিন সুইসাইড নোট লিখতাম।” বলেছেন ইমন। তবে জীবনের কঠিন সময়ে তার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিল গান। এরপর ২০১৭ সালে তার কাছে ফোন করেন অনুপম রায়। অনুপম রায় জানান “ইউটিউবে তোমার গান আমি শুনেছি। আমি একটা গান লিখেছি তুমি কি শুনবে?” কথাটা শুনে তিনি ছুটে গেলে স্টুডিওতে। পরের বছর পেলেন জাতীয় পুরস্কার। এরপর জিন্স পড়ে গান গাওয়া, টাকা নিয়ে প্রতিযোগীকে জিতিয়ে দেওয়া প্রভৃতি নানা ট্রোলের শিকার হয়েছেন তিনি। তবে থেমে যাননি কখনও। মাটিতে পা রেখে, জীবনের যুদ্ধে এগিয়ে গেছেন গায়িকা ইমন চক্রবর্তী।